Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

পৃথিবী জীবের একমাত্র বাসস্থান কেন?

পৃথিবী জীবের একমাত্র বাসস্থান কেন?

পৃথিবী জীবের একমাত্র বাসস্থান কেন

পৃথিবী ছাড়া আমাদের সৌর জগতে আর কোথাও জীব ও জীবনের অস্তিত্ব নেই। জীবনের দুটি অপরিহার্য প্রয়ােজনীয় জিনিস হল জল ও অক্সিজেন। বিজ্ঞানীরা মহাকাশে আজ পর্যন্ত যত পর্যবেক্ষণ, চালিয়েছেন, মহাকাশযান পাঠিয়েছেন, তার কোনােটিই সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ করতে পারেনি যে, সূর্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সৌর জগতের আর কোনাে গ্রহে প্রাণের স্পন্দন আছে।

আমরা জানি, জীবনসৃষ্টির মূল উপাদান হল হাই জেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস; এ ছাড়া, নানা খনিজ লবণ– যাদের উৎস হল লােহা, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, সােডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জল। পৃথিবীর পরিবেশে এই উপাদানগুলি আছে এবং এই উপাদানগুলি দীর্ঘ প্রায় ৪৫০ কোটি বছর ধরে নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া ও পরিবর্তন ঘটিয়ে এককোশী থেকে বহুকোশী জীবের উৎপত্তি ঘটিয়েছে। ফলে শুধু যে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছে তাই নয়, এই জীবজগৎ প্রাকৃতিক পরিবেশকে পরিবর্তিত করেছে নানাভাবে।

উদ্ভিদ সালােকসংশ্লেষের মাধ্যমে আদি বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে কার্বোহাইড্রেট আর অক্সিজেন তৈরি করেছে। কার্বন ডাইঅক্সাইড ভাঙার কাজ শুরু হতেই পৃথিবী আরও তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। তার পরে একসময়ে আবহমণ্ডলে ওপরের এলাকাগুলিতে ভাসমান তুষারকণা আর জলীয় বাষ্প বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছে। বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে পৃথিবীকে আরও জীবের বসবাসের সুযােগ্য করেছে। এইভাবে স্থলভাগের ও জলভাগের বায়ােম (biome) সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর জল, বায়ু, ভূমি, উদ্ভিদ, জীবজন্তু সবাই পরস্পরের সঙ্গে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি করেছে নিজেদের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার পরিবেশ।

পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখি যে, জীবনের বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণগুলি ফুটিয়ে তােলার জন্য বা সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য, যা জীবনের উদ্ভবের জন্য একান্ত দরকার, সেই অনুকূল পরিবেশই ওই গ্রহগুলিতে নেই। যেমন—

বুধ

এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। বুধের গড় তাপমাত্রা ১৬৭° সে.। এর বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত হালকা। সেখানে অতি সামান্য হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও অক্সিজেন আছে। এই বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবনের কোনাে অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা খুঁজে পাননি। প্রসঙ্গত, বুধ সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে মেরিনার ১০ (Mariner 10) ও মেসেঞ্জার (Messenger) নামক মহাকাশ প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম।

শুক্র

মার্কিন মহাকাশযান পাইয়ােনিয়ার (Pioneer) ও ম্যাগেলান (Magellan) এবং রুশ মহাকাশযান ভেনেরা ৯ ও ১০ (Venera 9 and 10) থেকে পাঠানাে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, শুক্রের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত শীতল ও ভূপৃষ্ঠ ভীষণ গরম। এর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি ঘন। এর সবটাই কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসে ভরপুর। বায়ুর চাপ পৃথিবীর তুলনায় প্রায় ৯২ গুণ বেশি। গড় তাপমাত্রা ৪৬৪° সেলসিয়াস। জলীয় বাষ্প প্রায় নেই। এই প্রতিকূল পরিবেশও জীবন সৃষ্টির অনুকূল নয়।

মঙ্গল

সৌরজগতে পৃথিবীর পরেই রয়েছে মঙ্গল গ্রহ। মার্কিন মহাকাশযান ভাইকিং (Viking), মার্স পাথফাইন্ডার (Mars Pathfinder), কিউরিয়সিটি (Curiosity), ভারতের মঙ্গলায়ন। (Mangalayaan) প্রকল্পের অধীন মার্স অরবিটর মিশন (২০১৩-১৪) থেকে পাঠানাে তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, মঙ্গল গ্রহের গড় তাপমাত্রা কখনােই শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে না। দিনেরবেলা এই তাপমাত্রা মাইনাস ৩০° থেকে রাত্রিবেলা মাইনাস ১২৫° পর্যন্ত নেমে যায়। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুব হালকা। এখানে রয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং বাকি ৫ ভাগের অর্ধেকটাই হল নাইট্রোজেন। জীবনের বিকাশ ঘটানাের জন্য যে জল এবং অক্সিজেন দরকার তার পরিমাণ মঙ্গল গ্রহে ভীষণ কম। এই কারণে মঙ্গলে প্রাণের স্পন্দন নেই। মঙ্গল গ্রহ সম্বন্ধে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে।

বৃহম্পতি

বৃহস্পতি সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ। মার্কিন মহাকাশযান পাইয়ােনিয়ার ১১ এবং ১২ ও ভয়েজার-১, ২ (Pioneer 11, 12 and Voyager 1, 2), ইউলিসিস (Ulysses), ক্যাসিনি (Cassini), গ্যালিলিয়াে (Galileo) থেকে পাঠানাে তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত হল যে, বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল মূলত হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসে তৈরি। এ ছাড়া, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন এবং অল্প অক্সিজেন এখানে পাওয়া যায়। এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৪০° সেলসিয়াস। এই হিমশীতল পরিবেশ এবং অক্সিজেন ও জলের অভাব বৃহস্পতি গ্রহে জীবন সৃষ্টি করতে পারেনি।

শনি

শনি গ্রহের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীবন সৃষ্টির জন্য কোনােদিনই অনুকূল ছিল না। পাইয়ােনিয়ার ১১ (Pioneer 11} এবং ভয়েজার ১, ২ (Voyager 1, 2) ও ক্যাসিনি (Cassini) মহাকাশ যান থেকে পাঠানাে তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পারা যায় যে, শনির বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত ঠান্ডা। এখানে কঠিন অ্যামােনিয়া ও বরফের স্তর এই গ্রহকে ঘিরে রয়েছে। মিথেন এবং হাইড্রোজেন শনির বায়ুমণ্ডলের প্রধান দুটি গ্যাস। এখানে জল নেই। অক্সিজেনও নেই। তাই জীব নেই। জীবজগতও নেই।

শনির পরে সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহগুলি হল ইউরেনাস ও নেপচুন। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল থেকে প্লুটোকে বামন গ্রহ (Dwat planet) হিসাবে গণ্য করা হয়। এই গ্রহগুলি এখনও জীবন সৃষ্টির অনুকুল নয়।

এমতাবস্থায় সমগ্র সৌরজগতের মধ্যে পৃথিবীতেই জীবনের উপযােগী পরিবেশ রয়েছে। কারণ—

(১) পৃথিবী সূর্য থেকে এমন এক নিরাপদ দূরত্বে আছে, যেখানে ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে গড় উষ্ণতা সারা বছর ২২° সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এই তাপমাত্রা জীবজগতের পক্ষে অনুকুল।

(২) পৃথিবীর ভর এবং অভিকর্ষ বল এমন একটা সুন্দর সামঞ্জস্য তৈরি করেছে যে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন প্রভৃতি গ্যাসগুলি ঠিক ঠিক মাত্রায় বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ধরা আছে। আর তার ফলেই পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশ সম্ভব হয়েছে।

(৩) জীবনধারণের অন্যতম শর্ত হল জল। পৃথিবীতে জলের জোগান যাতে অক্ষুন্ন থাকে তার জন্য রয়েছে বারিচক্র বা হাইড্রোলজিক্যাল সাইকল (Hydrological Cycle)। পৃথিবীর বাইরে আর কোথাও বারিচক্র নেই।

(৪) পৃথিবীর বারিমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডল জীবজগতের উদ্ভব ও বিকাশের অনুকূল। অক্সিজেনের উপস্থিতি এখানে জীবের শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করে। এ ছাড়া, বিপাক, জারণ বিজারণ প্রভৃতি কাজের জন্য অক্সিজেনের জোগানও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকেই পাওয়া যায়।

(৫) পৃথিবীতে জীবজগতের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার জন্য জীব-ভূ-রাসায়নিক চক্রগুলি সব সময় কাজ করে চলেছে। কার্বন চক্র, নাইট্রোজেন চক্র, অক্সিজেন চক্র প্রভৃতির সাহায্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের জোগান অবিঘ্নিত থাকে। ফলে পৃথিবীতে জীবনের প্রবাহ স্তব্ধ হয় না।

(৬) পৃথিবীর মাটি উদ্ভিদ জগতকে পুষ্টি জোগায়। অণুজীবীদের (micro-organism) বসবাসের বাসস্থান দেয়।

সুতরাং পৃথিবী সৌরজগতের মধ্যে একমাত্র গ্রহ যেখানে জীবন সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ আছে ও জীবজগৎ আছে। এই কারণে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে মহাশূন্যে ছুটে চলা মহাকাশযানের সঙ্গে তুলনা করেছেন (Spaceship Earth)।

Read More

Leave a reply