বাংলার নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা
উনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে এক যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আলােড়নের সূচনা হয়। ফলে মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা, চিরাচরিত প্রথা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার প্রভৃতির বিরুদ্ধে বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠে। বাংলার সংস্কৃতি ও চিন্তার জগতে এক নবযুগের সূচনা হয়। এই ঘটনা বাংলার নবজাগরণ’ নামে পরিচিত। বাংলায় নবজাগরণ দেখা দিলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
১) শহরকেন্দ্রিক
বাংলার এই নবজাগরণ ছিল শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে কলকাতাকেন্দ্রিক। গ্রাম বাংলার বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর সাথে এর কোনাে সম্পর্কই ছিল না।
২) এলিটিস্ট আন্দোলন
এই জাগরণ শুধু পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল নাগরিক সমাজে সীমাবদ্ধ ছিল। তাই অধ্যাপক অনিল শীল এই জাগরণকে ‘Elitist Movement’ বলে অভিহিত করেছেন।
৩) প্রাণশক্তির অভাব
ইউরােপীয় নবজাগরণের যে প্রাণশক্তি ও আবেগ ছিল বাংলার নবজাগরণে তার অনেকাংশে অভাব ছিল।
৪) হিন্দু জাগরণ
বাংলার এই নবজাগরণ ছিল মূলতঃ হিন্দু জাগরণবাদ। কারণ এই জাগরণ অনেকাংশে হিন্দু সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এই সময়ের সংস্কার প্রচেষ্টা হিন্দুধর্ম ও সমাজকে অতিক্রম করতে পারেনি। তাই বাংলার মুসলিম সমাজ এই আন্দোলনের বাইরেই ছিল। বাংলার নবজাগরণের ফলে গড়ে উঠা হিন্দু জাতীয়তাবাদ বাংলার মুসলিম সমাজকে দূরে রেখে দিয়েছিল।
৫) বৈপ্লবিক পরিবর্তনে ব্যর্থ
এই সংস্কার আন্দোলনেও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি। এই সময়ের সংস্কারকরা ধর্ম ও সমাজকে অবিকৃত রেখে কিছু সংস্কার করতে চেয়েছিল মাত্র। এমনকি তারা কোম্পানীর সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র সম্পর্কেও উদাসীন ছিলেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .