টিপু সুলতান এর পরিচয়
টিপু সুলতান ছিলেন মহীশূরের স্বাধীন সুলতানির প্রতিষ্ঠাতা হায়দার আলির পুত্র। টিপু নিজে বুঝেছিলেন যে সুযােগ পেলেই ক্ষমতার লােভে ইংরেজরা মহীশূরের ওপর আঘাতহানবে। তাই তিনি কোনাে মতেই সচুতুর ইংরেজকে বিশ্বাস। করতেন ‘মহীশূরের বাঘ’নামে পরিচিত এই শাসকটি তাই জন্মভূমি রক্ষার জন্য নিজেও তরবারি হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতাে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাই স্যার জন ম্যারিয়েট লিখেছেন- টিপুর মৃত্যুর ফলে ভারতের রঙ্গম থেকে ইংরেজ কোম্পানির সর্বাপেক্ষা। কঠোর, অটল, সর্বাপেক্ষা একাগ্র ও শক্তিশালী শত্রু অপসৃত হয়।
টিপুর সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক
(১) বৈরিতার মনােভাব :
মহীশূরের শার্দূল টিপু ছিলেন ইংরেজরা ঘােরতর শত্রু। সমসাময়িক ভারতবর্ষে তার মতাে ব্রিটিশের ভয়ংকরতম শত্রু আর কেউই ছিলেন না। দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশদের সম্প্রসারণ প্রতিরােধে লৌহসম দৃঢ়তায় দক্ষিণ ভারতে ইংরেজ শক্তিকে বিলুপ্ত করতে কেবল নিজ শক্তির ওপর নির্ভর না করে তিনি ইংরেজের শত্রু ফ্রান্সের সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের কাছেও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান।
(২) ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধ :
ম্যাঙ্গালােরের সন্ধি দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের স্থায়ী নিষ্পত্তি ঘটাতে ব্যর্থ হয়। আসলে এই সন্ধি ছিল নতুন এ যুদ্ধ শুরুর কাছে সাময়িক বিরতি মাত্র। টিপু সুলতান বুঝেছিলেন যে, ক্ষমতার লােভেই ইংরেজরা মহীশূর দখল করার চেষ্টা করবে। তাই তিনি গােপনে কনস্টান্টিনােপল, কাবুল, মরিশাস প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সামরিক সাহায্যের জন্য যােগাযােগ রাখেন এবং ফরাসি সম্রাট ও তুরস্কের সুলতানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলেন।
(৩) তৃতীয় যুদ্ধ :
ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের সময় ইংরেজরা নিজামের কাছে যে শক্তিসংঘ গঠনের প্রস্তাব পাঠায় তা থেকে টিপুকে বাদ রাখে। টিপুকে এই জোটের বাইরে রাখায় টিপু অত্যন্ত মর্মাহত হন এবং ক্ষুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ অধীনস্ত রাজ্য ত্রিবাঙ্কুর আক্রমণ করেন। (১৭৯০ খ্রিঃ)। কর্ণওয়ালিস নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্রিশক্তি জোট গড় করেন। এই শক্তি জোটের সঙ্গে টিপুর তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু ইংরেজদের সঙ্গে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি(১৭৯২ খ্রিঃ) স্বাক্ষর করেন, যার ফলে মহীশূর রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ টিপু ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ও তার দুই পুত্রকে কোম্পানির কাছে জামিন হিসেবে রাখতে বাধ্য হন।
(৪) চতুর্থ যুদ্ধ :
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ওয়েলেসলি টিপুকে এক চরমপত্র পাঠিয়ে ‘অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি’-র চুক্তিতে স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন। টিপু এই চুক্তি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলে ওয়েলেসলির নেতৃত্বে ইংরেজ, মারাঠা ও নিজামের জোট মহীশূর আক্রমণ করেন, শুরু হয় চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ। সদাশির ও মলভেরির যুদ্ধে পরাজিত হয়ে টিপু তার রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমে আশ্রয় নেন। শত্রুপক্ষ রাজধানী অবরােধ করলে সংঘর্যে টিপু নিহত হন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .