বাজারদর নিয়ন্ত্রণে খলজির গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ
আলাউদ্দিন খলজি রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়ােগের দ্বারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাননি। কেননা তিনি জানতেন, অর্থনীতির সাধারণ ধারা ভেঙে এবং বলপ্রয়ােগ করে এই ব্যবস্থা কার্যকরী করা যাবে না। তাই তিনি পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে দ্রব্যসামগ্রীরমূল্য নির্ধারণ করে দেন। তিনি কিছু নীতির ওপর ভিত্তি করেই দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন তৈরি করেন। বরণির তারিখ-ই ফিরােজশাহি গ্রন্থে এই বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়।
বিধিনিষেধ ঃ
আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে বিভিন্ন নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধ তৈরি করেন। যেমন—
(১) খাদ্যদ্রব্য, বস্ত্র, গবাদিপশু, এমনকি দাসদাসীদের মূল্যও নির্ধারণ করে দেন।
(২) দোয়াব অণ্ডলের কৃষকদের কাছ থেকে শস্যের মাধ্যমে রাজস্ব গ্রহণ করা হত। এই শস্য দিল্লির বিভিন্ন সরকারি গুদামে মজুত করা হত।
(৩) সরকার ব্যতীত কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত ফসল মজুত নিষিদ্ধ হয়।
(৪) কোনাে ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের বেশি নিলে
তার মালপত্র বাজেয়াপ্ত করে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কোনাে ব্যবসায়ী ওজনে কম দিলে তার দেহ থেকে সমপরিমাণ মাংস কেটে নিয়ে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
(৫) মজুতদারি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে শস্যের মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা দূর হয়। আলাউদ্দিন ‘রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে দুর্ভিক্ষের সময় দুটি ক্রীতদাস-সহ প্রতিটি পরিবারকে আধ মন করে খাদ্যশস্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেন।
মূল্য তালিকা :-
আলাউদ্দিন তার প্রজাদের ‘খালক-ই খুদাই’ বলে মনে করতেন। এজন্য জনগণের সেবা করতে তিনি দ্রব্যমূল্যের তালিকা তৈরি করেন। মূল্য তালিকায় নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি, এমনকি দাসদাসীদের মূল্যও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
নির্দেশনামা ও বাজার প্রতিষ্ঠা :
আলাউদ্দিন বাজারদর নিয়ন্ত্রণ চালু করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশনামা ঘােষণা করেন। শস্য সরবরাহ, পরিবহণ সুনিশ্চিত করা, শস্য বাজার পরিচালনা, অন্যায় লেনদেন বন্ধ করা প্রভৃতি বিষয়ে তিনি একাধিক নির্দেশ জারি করেন। তার নির্ধারিত মূল্যে পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য দিল্লিতে বিশেষ ধরনের চারটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।
(১) মান্ডি’ নামে এক ধরনের শস্যবাজার খােলা হয়। শাহনা-ই-মান্ডি’ নামে এক শ্রেণির কর্মচারী এই বাজারের প্রধান ছিলেন। এখানে চাল, ডাল, গম, বার্লি প্রভৃতি বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ন্ত্রিত মূল্যে বিক্রি হত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনাে অবস্থাতেই এখানে জিনিসপত্রের দাম ওঠা-নামা করত না। বাজারের ওপর নজরদারি করার জন্য বারিদ’ নামে গুপ্তচর নিযুক্ত ছিল।
(২) বস্তুসামগ্রী চিনি, মাখন, তেল, ফলমূল, ওষুধপত্র প্রভৃতি কেনাবেচার জন্য সেরা-ই-আদল’ নামে বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। বায়ুনের প্রবেশদ্বারের পাশে এই বাড ‘র প্রতিষ্ঠিত হয়। দেওয়ান-ই-রিয়াস নামে প্রতিষ্ঠান এই বাজারের ব্যবসায়ীদের নাম নথিভুক্ত করত।
(৩) গবাদিপশু, ঘােড়া, ক্রীতদাস প্রভৃতি বিক্রির জন্য পৃথক বাজার খােলা হয়।
(৪) নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়বিক্রয়ের জন্য দিল্লির বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বাজার খােলা হয়। এইসব বাজারে মাছ, মাংস, তরিতরকারি, বাসনপত্র, জুতাে, চিরুনি, টুপি প্রভৃতি কেনাবেচা চলত।
আরো পড়ুন :-
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .