সাইমন কমিশনকে (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ) কেন্দ্র করে ভারতসচিব লর্ড বার্কেনহেড সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে ভারতীয়দের যােগ্যতার প্রশ্ন তুলে ব্যঙ্গ করেছিলেন। এর ফলে ভারতে দ্বৈত প্রতিক্রিয়া ঘটেছিল—যথা সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলন এবং ভারতীয়গণ। কর্তৃক সর্বদলের গ্রহণযােগ্য একটি সংবিধান রচনার প্রস্তুতি। এই সংবিধান রচনা প্রস্তুতির চরম পরিণতি ছিল নেহরু রিপাের্ট।
নেহরু রিপাের্ট
১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সর্বদলীয় সম্মেলনে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য পন্ডিত মতিলাল নেহরুর সভাপতিত্বে নয় জনকে (কংগ্রেস দল থেকে সুভাষচন্দ্র বসু, মুসলিম লিগ থেকে আলি ইমাম, হিন্দু মহাসভা থেকে এম.আর. জয়াকর এবং শিখ লিগ থেকে সদার মঙ্গল সিং প্রমুখ) নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি নেহরু কমিটি নামে পরিচিত। ওই বছর আগস্ট মাসে লক্ষ্মৌতে সম্মেলনের পূর্ণ অধিবেশনে মতিলাল নেহরু সংবিধানের খসড়া বা নেহরু রিপাের্ট পেশ করেন।
নেহরু রিপাের্টের ধারা
এই রিপাের্টে (১) ভারতবাসীর জন্য ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন-এর কথা বলা হয়। (২) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। (3) পৃথক নির্বাচনমন্ডলীর পরিবর্তে যৌথ নিবাচন ব্যবস্থার প্রবর্তনের কথা বলা হয়। (4) বাংলার মুসলমানগণ এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের অসুমলিমদের জন্য স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি স্বীকার করা হয়। (৫) সর্বজনীন ভােটাধিকার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার কথা বলা হয়। (৬) কেন্দ্র ও প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল সরকার গঠনের মতামত ব্যক্ত করা হয়। (৭) প্রাদেশিক আইনসভাগুলিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া
নেহরু রিপাের্ট অনুমােদনের জন্য কলকাতায় সর্বদলীয় সম্মেলন আহূত হয় (১৯২৮ খ্রিঃ), কিন্তু শিখ লিগ, মুসলিম লিগ ও হিন্দুমহাসভা তা অনুমােদন করেনি। এরপর (১) মুসলিম লিগ নেতা মহম্মদ আলি জিন্না, লিগের কট্টরপন্থীদের সঙ্গে সমঝােতা স্থাপন করে তার বিখ্যাত “চৌদ্দ দফা দাবি ঘােষণা করেন (মার্চ, ১৯২৯ খ্রিঃ)। (২) অন্যদিকে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের কলিকাতা অধিবেশনে। নেহরু-রিপাের্টের আলােচনার সময় দারুণ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্র আবার পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তুলে এক সংশােধনী প্রস্তাব রাখেন। তবে গান্ধিজি পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না, বা তিনি এই দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের পক্ষপাতিত্ব ছিলেন না। তবে তিনি ঘােষণা করেন, নেহরু রিপাের্ট গৃহীত হবে এবং এক বছরের মধ্যে সরকার এই রিপাের্ট মেনে না নিলে পূর্ণস্বরাজের জন্য আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হবে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .