ভূমিকা :- পঞ্চাদশ ও ষােড়শ শতকের ইউরােপের ইতিহাসে প্রধানতম ঘটনাগুলি ছিল নবজাগরণ, ভৌগােলিক আবিষ্কার ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষত গণিত, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল তা ‘বিজ্ঞান বিপ্লব’ নামে পরিচিত। অপর একটি মতে, ‘বিজ্ঞান বিপ্লব’ বলতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা ও দর্শনের বিপ্লবকে বােঝায়, যার উৎসমুখ হল কোপারনিকাসের তত্ত্ব এবং এর পরিণতি ঘটে নিউটনের কালজয়ী মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের মাধ্যমে।
বিজ্ঞন দৃষ্টি
(১) পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান :- মধ্যযুগে শেষদিকে ইউরােপীয়দের ভৌগােলিক জ্ঞান বৃদ্ধি পেয়েছিল। পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কিত ধারণার পরিবর্তন ঘটলে ইউরােপের বেশ কিছু মানুষ জানতে পারে যে ইউরােপ থেকে পশ্চিম বা পূর্বে যে-কোনাে দিক দিয়ে সমুদ্রপথে সােজাসুজি যাত্রার মাধ্যমে প্রাচ্যে পৌঁছানাে সম্ভব হতে পারে।
(২) সমুদ্রযাত্রার সহযােগী যন্ত্র :- দিক নির্ণয়ের জন্য কম্পাস, অ্যাস্ট্রোলের (অক্ষাংশ নির্ণয় যন্ত্র), মানচিত্র, নকশা, পথনির্দেশ তালিকা প্রভৃতির উদ্ভাবন হলে সমুদ্রযাত্রা পূর্বের তুলনায় অনেক নিরাপদ হয়েছিল।
(৩) সৌরকেন্দ্রিক বিশ্ব ঃ পােল্যান্ডের বিজ্ঞানী কোপারনিকাস প্রমাণ করেন যে, সূর্য স্থির এবং পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কোপারনিকাস তার এই বক্তব্য প্রচার করেননি। কোপারনিকাসের মৃত্যুর পর ইটালির বিজ্ঞানী গ্যালিলিয়াে দূরবিন যন্ত্রের আবিষ্কার করেন এবং এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি কোম্পানিকাসের তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণ ও প্রচার করেন।
(৪) খনিবিদ্যা চর্চা :- যুদ্ধের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে লােহা, তামা, গন্ধকের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। যার ফলশ্রুতিতে খনিবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়। সম্ভবত জার্মান বিজ্ঞানী এগ্রিকোলার প্রথম ইস্পাত নির্মাণের পদ্ধতি বর্ণনা করেন।
(৫) পদার্থবিদ্যা চর্চা :- খনিজ ও ধাতু বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে পদার্থবিদ্যার উন্নতি ঘটে। নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানী জানসেন সম্ভবত প্রথম কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেন (১৫৯০ খ্রি.)।
(৬) মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব :- ইংল্যান্ডের রয়্যাল সােসাইটির বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব আবিষ্কার করেন এবং সৌরজাগতিক গতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন।
(৭) রসায়নবিদ্যা ঃ জে. বি. ভ্যান হেলমন্ট প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বাতাসের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে। তিনিই প্রথম কার্বন ডাইঅক্সাইডকে চিহ্নিত করেন।
উপসংহার :- বিজ্ঞানীরা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সত্যানুসন্ধানে ব্রতী হয়েছিলেন। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব দু’ভাবে জ্ঞানচর্চা ও সমাজের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। প্রথমত, ব্যাবহারিক দিক থেকে যেসব পরিবর্তন ঘটেছিল তার ফলে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, ভৌগােলিক আবিষ্কার সব দিকেই রূপান্তর ঘটেছিল। আবার অন্যদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান দর্শনের মধ্যে নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল। পদার্থবিদ্যা, জ্যোতিবিদ্যা, রসায়ন সমস্ত ক্ষেত্রেই জ্ঞানের পরিধি প্রসারিত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .