নারীশিক্ষায় বিবেকানন্দের অবদান
নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্রহ্মত্তত্ত সন্ন্যাসী বলেছেন, “There is no hope of rise for that family or country where there is no education of women, where they live in sadness. For this reason, they have to rise first.” অর্থাৎ যে পরিবারে বা দেশে নারীদের কোনাে শিক্ষা নেই, এবং যেখানে তারা দুঃখের মধ্যে বাস করে, সেই পরিবার বা দেশের উন্নয়নের আশা নেই। সেই কারণে তাদের প্রথমে তুলে ধরতে হবে।
সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ভারতীয় নারীদের ব্যথা-বেদনা-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে নারীশিক্ষা, নারীমুক্তির জন্য দেশবাসীকে সজাগ হতে পরামর্শ দিয়েছেন। নারীশক্তির বিকাশই হল। দেশের অগ্রগতির অন্যতম সােপান। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল স্বামীজির কথায়, “Oh, India, do not forget the ideal of womenhood-Sita, Sabitri and Damayanti.” অর্থাৎ, আজ আমাদের ভুললে চলবে না, সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তীর কথা, ভুললে চলবে না তাদের আদর্শের কথা, মহত্বের কথা, নারীত্বের কথা।
বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের নারীদের দুর্দশা দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। সমাজের নারীর অবমূল্যায়নের জন্য তিনি অশিক্ষাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, যে দেশ নারীকে শ্রদ্ধা করে না, সেই দেশ জাতি কখনও বড়াে হতে পারে না। নারীশিক্ষা প্রসারে বিবেকানন্দের অবদানগুলি হল—
(১) গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন
বিবেকানন্দ মনে করতেন মেয়েদের সুশিক্ষিত করে তুলতে গেলে তাদের জন্য গ্রামে গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। মেয়েরা শিক্ষিত হলে তবেই একটি জাতি সুগঠিত হতে পারবে।
(২) ব্রহ্মচারিণী দল গঠন
বিবেকানন্দ ব্রহ্মচারিণী দল গঠনের কথা বলেছেন, যারা মেয়েদের শিক্ষা দেবেন। মেয়েরা যাতে অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারে তার জন্যই তিনি এই দল গঠনের কথা বলেছেন। এর গ্রামে গ্রামে গিয়ে মেয়েদের শিক্ষাদান করবে।
(৩) নারীমঠ স্থাপন
বিবেকানন্দ মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য নারীমঠ এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছেন। এই সকল বিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ধরনের শিক্ষাদানের ব্যবস্থার কথা বলেছেন।
(৪) পাঠক্রম
বিবেকানন্দ মনে করতেন মেয়েরা মানুষ হলে তবেই ভবিষ্যতে তাদের সন্তান সন্ততির দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। সবার মধ্যে দেশভক্তির ভাবজেগে উঠবে, তাই তিনি নারীশিক্ষার পাঠক্রমের মধ্যে ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য, দর্শন, ব্যাকরণ, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভূগােল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সেলাই, রান্না, পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়গুলি শিক্ষাদানের কথা বলেছেন।
(৫) বেলুড় মঠ
বিবেকানন্দ মেয়েদের শিক্ষার জন্য বেলুড়ে একটি মঠ স্থাপনের পরিকল্পনা করেন যা এখন সারদা মঠ নামে পরিচিত। এই মঠে মেয়েরা ইচ্ছে করলে সারাজীবন ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বন করে থাকতে পারে। এ ছাড়া এই মঠে অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, সেবামূলক ব্রত পালনে মেয়েদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে।
সুতরাং, নারীশিক্ষা প্রসারে স্বামী বিবেকানন্দ উপরােক্ত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, “It is in the hands of education and pious, mothers that great men are born.” তবে সম্পূর্ণ পাশ্চাত্যভাবে মেয়েদের তৈরী করার প্রতিবাদে তিনি বলেছেন, “আমাদের নারীগণকে আধুনিকভাবে গড়িয়া তুলিবার যে সকল চেষ্টা হইতেছে, সেগুলির মধ্যে যদি সীতা চরিত্রের আদর্শের মধ্যে ভ্রষ্ট করিবার চেষ্টা, থাকে, তবে সেগুলি বিফল হইবে।
Read More
- ব্রহ্মবাদিনী ও সদ্যোবাদ বলা হত?
- স্ত্রীধন বলতে কী বােঝ?
- কন্ঠী ও কল্পী কী?
- শক্তিনী কাদের বলা হত?
- মিস মেরি কার্পেন্টর কে ছিলেন?
- উডের ডেসপ্যাচ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- পণ্ডিতা রামাবাঈ কে?
- বেগম রােকেয়া শাখাওয়াত কে ছিলেন?
- মাতাজী মহারানি তপস্বিনী কে ছিলেন?
- ভগিনী সুব্বালক্ষ্মী কে ছিলেন?
- সারদা সদন কে, কী উদ্দেশ্য স্থাপন করেন?
- নারীশিক্ষার বিভিন্ন সমস্যাগুলি ব্যাখ্যা করাে।
- নারী শিক্ষার সমস্যা সমাধানের উপায়গুলি কী কী ?
- নারীশিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখাে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .