বিজয়নগর-বাহমনি সংঘর্ষে ধর্মের ভূমিকা
মধ্যযুগে দাক্ষিণাত্যে ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর নামে একটি হিন্দু রাষ্ট্রের এবং ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাহমনি নামে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। পরস্পরবিরােধী এই দুটি প্রতিবেশী রাজ্য নানা কারণে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। এই সংঘর্ষের অন্যতম একটি কারণ ছিল উভয় রাজ্যের পৃথক ধৰ্মৰ্মত।
বিজয়নগরের মুসলিম-বিরােধিতা
দিল্লি সুলতানির শাসনকালে মুসলিম প্রাধান্যের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে হিন্দুপ্রধান বিজয়নগর রাজ্যটির উত্থান ঘটে। বিজয়নগরের হিন্দু জাগরণবাদ প্রতিবেশী মুসলিম-শাসিত বাহমনি রাজ্যের ধ্বংসসাধনে উন্মুখ হয়েছিল।
বাহমনির হিন্দু-বিরােধিতা
হিন্দুরাজ্য বিজয়নগরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই প্রতিবেশী অঞ্চলে মুসলিম-প্রধান বাহমনি রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল। বিজয়নগরের মুসলিম-বিদ্বেষের স্বাভাবিক পরিণতিতেই প্রতিবেশী বাহমনি রাজ্যের হিন্দুবিদ্বেষ বিজয়নগরের দিকে ধাবিত হয়েছিল।
বিতর্ক
বিজয়নগর ও বাহমনি রাজ্যের সংঘা কে শুধু ধর্মীয় সংঘাতের দ্বারা ব্যাখ্যা করা অনুচিত বলে কেউ কেউ মনে করেন। তাদের মতে, উভয় রাজ্যে ধর্মীয় সহনশীলতার বহু উদাহরণ পাওয়া যায়।
(১) বাহমনি রাজ্যের ধর্মীয় উদারতা : বাহমনি রাজ্যে প্রচুর হিন্দু বাস করত এবং সরকারি কাজে বহু হিন্দু নিযুক্ত ছিল। হাসান গঞ্জু (১৩৪৭-১৩৫৮ খ্রি.) অর্থাৎ আলাউদ্দিন বাহমন শাহই ভারতে প্রথম মুসলিম শাসক যিনি হিন্দুদের ওপর থেকে জিজিয়া কর তুলে দেন। বাহমনি সুলতান তাজউদ্দিন ফিরােজ শাহ (১৩৯৭-১৪২২ খ্রি.) বহু দক্ষিণি ব্রাক্ষ্মণকে তার রাজস্ব বিভাগে নিযুক্ত করেন।
(২) বিজয়নগর রাজ্যের ধর্মীয় উদারতা : বিজয়নগর রাজ্যটিও কেবল মুসলিম-শাসিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়নি। বরং তারা উড়িষ্যা ও অন্যান্য হিন্দুরাজ্যের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিল। দ্বিতীয় দেবরায়ের সেনাবাহিনীতে বহু মুসলিম নিযুক্ত ছিলেন। বিজয়নগরের রাজারা কখনাে ইসলামবিরােধী প্রচারও করেননি।
মূল্যায়ন
প্রকৃতপক্ষে ধর্ম নয়, বিজয়নগর ও বাহমনি রাজ্যের সংঘাতের প্রধান কারণ ছিল সমকালীন রাজ্য দুটির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংঘাত। এই লড়াই ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াই, হিন্দু ও মুসলিমের লড়াই নয়। লড়াইয়ের কোনাে কোনাে পর্যায়ে ধর্মীয় উন্মাদনা কার্যকরী থাকলেও তা কখনােই সংঘাতের প্রধান কারণ ছিল না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .