Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

প্রথম তিনজন পেশােয়ারের নেতৃত্বে মারাঠা শক্তির বিস্তার বর্ণনা করাে।

মারাঠা শক্তির বিস্তার

শিবাজী আপন শৌর্য, কর্মদক্ষতা ও প্রতিভার দ্বারা মারাঠজাতির মধ্যে এক নবজাগরণের সৃষ্টি করেছিলেন এবং মারাঠারাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর নানা কারণে সেই রাজ্যে দুর্বলতা দেখা দিতে লাগল। তার পুত্র শম্ভুজী মােগলদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছিলেন সত্য, কিন্তু যথেষ্ট রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় না দিতে পারায় তিনি ১৬৮৭ খ্রীষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের হস্তে পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর পুত্র শাহ্ মােগলদের হস্তে বন্দী হয়। কিন্তু মারাঠাশক্তিকে একেবারে পর্যদস্তকরাঔরঙ্গজেবের পক্ষে সম্ভব হল না। ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মারাঠাগণ প্রবল শক্তিরূপে দেখা দিল। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মারাঠাশক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য দিল্লী থেকে শম্ভুজীর পুত্র শাহকে মুক্তি দেওয়া হল। মারাঠাশক্তি আত্মকলহে দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। এই সময়ে শাহ কোঙ্কনের বালাজী বিশ্বনাথ নামে এক দূরদর্শী ক্ষমতাবান ব্রাত্মণের হতে শাসনক্ষমতা অর্পণ করলে মারাঠা জাতি আবার সঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠল।

পেশােয়াগণের নেতৃত্ব

বালাজী বিশ্বনাথ ছিলেন দরিদ্র ব্রাহ্মণবংশের সন্তান। কিন্তু আপন কৃতিত্ব ও প্রতিভার পরিচয় দিয়ে তিনি শাহু কর্তৃক রাজ্যের পেশােয়া পদে নিযুক্ত হন। ক্রমে কর্তব্যনিষ্ঠ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ক্ষমতার জোরে তিনিই রাজ্যের সর্বময় কর্তা হয়ে উঠলেন। শাহু কেবলমাত্র নামে রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত রইলেন। এই সময় থেকেই মারাঠা রাজ্যে পেশােয়াতন্ত্রের সূচনা হল।

অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বালাজী বিশ্বনাথ বিদ্রোহীসর্দারদের দমন করে কূটনীতির সাহায্যে। তারাবাঈ-এর পরিকল্পনা ব্যর্থ করে মারাঠাজাতির সংহতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলেন। রাজস্ববিভাগেও বিভিন্ন সংস্কার প্রবর্তন করে তিনি মারাঠাজাতিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। ঐক্যবদ্ধ করে তুললেন। বৈদেশিক ক্ষেত্রেও তার সাফল্য কম নয়। তিনি ধ্বংসসন্মুখ মােগল সাম্রাজ্যের উপর আঘাতের পর আঘাত হানতে লাগলেন এবং বিভিন্ন অঞল। থেকে চৌথ’ও সরদেশমুখী’আদায় করতে আরম্ভ করলেন। অবশেষে ১৭১৪ খ্রীষ্টাব্দে। বালাজীর সহিত সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের হুসেন আলীর সন্ধি হল। মারাঠা রাজশাহুদাক্ষিণাত্যের আন্দেশ, বেরার, ঔরঙ্গবাদ, বিদর, হায়দ্রাবাদ ও বিজাপুর এই ছয়টি সুবা থেকে ‘চৌথ’ও সরদেশমুখী’ আদায়ের অধিকার প্রাপ্ত হলেন। ইহার বিনিময়ে তিনি মােগল সম্রাটকে। বাৎসরিক কর প্রদান ও অশ্বারােহী সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুত হলেন। এই সন্ধির ফলে শাহু মােগল সম্রাটের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিলেন, মােগলদের সহিত শান্তি থাপিত হল, সঙ্গে সঙ্গে দাক্ষিণাত্যে মারাঠাদের রাজনৈতিক প্রভুত্ব স্থাপিত হল। বালাজী। বিশ্বনাথের আমলে মারাঠাগণের মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পেল, তেমনি তারা এক দুর্ধর্ষশক্তিতে পরিণত হল।

প্রথম বাজীরাও

১৭২০ খ্রীষ্টাব্দে বালাজী বিশ্বনাথের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র প্রথম বাজীরাও পেশােয়া হলেন। সামরিক প্রতিভা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও সুচতুর কূটনীতিবিদ হিসেবে তিনি পেশােয়াগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। মহারাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সর্বভারতীয় এক অখন্ড হিন্দুরাজ্য স্থাপন করাই তার রাজনৈতিক আদর্শ ছিল। তিনি তার এই অখন্ড। হিন্দু সাম্রাজ্য গঠনের বা‘হিন্দুপাদ পাদশাহীর’ পরিকল্পনা সমস্ত হিন্দু দলপতি ও রাজাদের সম্মুখে উপস্থিত করলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়িত করার পথে অন্তরায় ছিল মােগল সাম্রাজ্য। সুতরাং কিছুদিনের মধ্যেই মােগল শক্তির সঙ্গে তার সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠল।

তার আদর্শ বাস্তবে রূপায়িত করবার জন্য তিনি প্রথম থেকেই সাম্রাজ্য বিস্তারে মনােযােগী হলেন। তিনি মালব, গুজরাট ও বুন্দেলখন্ডের কিয়দংশ জয় করেন। এবং কর্ণাট পর্যন্ত অভিযান প্রেরণ করেন। জয়পুরের দ্বিতীয়জয়সিংহ এবংবুন্দেল রাজছত্রশালের সহিত মিত্ৰতা স্থাপন করে তিনি দিল্লীর উপকণ্ঠ পর্যন্ত অগ্রসহ হলেন। মারাঠাশক্তির বিবর্তনের ইতিহাসে বাজীরাও এর অবদান বিশেষ উল্লেখযােগ্য তারনীতি ও কার্যকলাপের ফলে মারাঠা রাজ্য সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের রাজনীতিতে অগ্রগণ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। রাজনৈতিক দিক দিয়ে সাফল্য লাভ করলেও বাজীরাও প্রশাসক ও সংগঠকরূপেসাফল্যের পরিচয় দেননি।

বালাজী বাজীরাও

প্রথমে বাজীরাও-এর ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যু হলে তার পুত্র বালাজী বাজীরাও পেশােয়া পদ লাভ করেন ও রাষ্ট্রের সর্বাত্মক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। ফলে তার বিরুদ্ধে তারাবাঈ ও বরােদার গাইকোয়াড় বিদ্রোহ করলে তিনি তাদের দমন করতে সক্ষম হন। রাজারামের সময় থেকেই মারাঠা সাম্রাজ্যের ভিত্তিতে ফাটল সৃষ্টি করা হয়েছিল, জায়গির প্রথা পুনঃপ্রবর্তন করে মারাঠাশক্তির সাম্রাজ্যবিস্তারের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সাফল্য দেখা যাচ্ছিল, অপর দিকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উহার সংহতি ক্রমেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে কয়েকটি অঞলে শাসক পরিবারের উদ্ভব হল। যেমন -বেরারের ভোসলে, বরােদার গাইকোয়াড়, গােয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, ইন্দরের হােলকার এবং মালবের অন্তর্গত ধার নামক অঞ্চলের পাবার। ইহারা পেশােয়ার অধীন ছিল বটে, কিন্তু ক্রমেই স্বাধীন কার্যকলাপ ও পরস্পরের মধ্যে স্বার্থন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সময়ে সময়ে তারা পেশােয়ার ক্ষমতাকে উপেক্ষা করত। এই সকল উনার ফলে মারাঠা সাম্রাজ্যের সংহতি দ্রুত বিনষ্ট হতে লাগল।

বালাজীরাও

তার পিতার ন্যায় সাম্রাজ্যবিস্তারে সচেষ্ট ছিলেন সত্য, কিন্তু কয়েকটি বিষয়ে তিনি তার অনুসৃত নীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়লেন। প্রথমত, ‘হিন্দুপাদ-পাদশাহী’ আদর্শের উপরেও তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেন না। তার সৈন্যবাহিনী হিন্দুদের রাজ্যও নির্বিচারে লুণ্ঠন করে চলল। ফলে সমস্ত হিন্দু দলপতি রাজাগণকে এক আদর্শে ঐক্যবদ্ধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। তিনি রাজপুত ও জাঠদের সহানুভূতি থেকেও বঞ্চিত হলেন। এইজন্যই পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে রাজপুতগণ নিরপেক্ষ রয়ে গেল। কিন্তু এসমস্ত সত্ত্বেও মারাঠা-সাম্রাজ্য ভারতের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার সুযােগে চারিদিকে বিস্তৃত হতে লাগল। নিজাম ও মহীশূর রাজ্য পরাজিত হয়ে তাদের রাজ্যের কিয়দংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। বেরারের ভোসলে বাংলার নবাব আলিবর্দী খাঁর নিকট চৌথ আদায় করলেন এবং উড়িষ্যা জয় করলেন। পেশােয়ার ভ্রাতা রঘুনাথ রাও উত্তর ভারতে সামরিক অভিযান চালিয়ে পাঞ্জাব পর্যন্ত অঞ্চল দখল করলেন। মারাঠা শক্তি ও মর্যাদা চরমে পৌঁছল।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply