১৯১৯ খ্রিঃ ব্রিটিশ কর্তৃক রাওলাট আইন প্রবর্তনকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারতে প্রতিবাদীদের তীব্র ঢেউ ওঠে। পাঞ্জাবেও এই ঢেউ আছড়ে পড়ে। পাঞ্জাবের দুই শীর্ষ নেতা ডঃ সত্যপাল ও সৈফুদ্দিন কিচলুকে রাওলাট আইনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে আটক করে রাখলে সমগ্র পাঞ্জাব প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে। পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক জেনারেল ও ডায়ার ১১ই এপ্রিল সমস্ত রকমের সভা সমিতি নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু ১৩ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে এক পূর্ব নির্ধারিত প্রতিবাদ সভায় ১০ হাজারের বেশি নিরীহ নরনারীর সমাবেশে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। এর ফলে ৩৭৯ জন নিহত এবং ১২০০ জন আহত হন। তারপর সান্ধ্য আইন জারি করা হয় যাতে আহতের কাছে নিকটজনেরা পৌঁছতে না পারে। এই হত্যাকান্ড ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
১) এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের স্বৈরাচারী মনােভাব প্রকট হয়ে উঠেছিল। কেননা জালিয়ানওয়ালাবাগের অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিল প্রায় ১০,০০০ নিরস্ত্র জনতা। জেনারেল ডায়ারের সেনাবাহিনী কোনােরুপ সর্তকবাণী ঘােষণা না করে এই নিরস্ত্র জনতার ওপর ১০ মিনিট ধরে ১৬০০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। সরকারী মতে ৩৭৯ জন নিহত ও ১২০০ জন আহত হয়। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশী।
২) ব্রিটিশ জাতি তাদের শাসনব্যবস্থাকে ‘সুশাসন’ বলে যে গর্ব বােধ করত, তা এই ঘটনায় কালিমা লিপ্ত হয়ে পড়ে। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
৩) জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের জেরে জাতীয় আন্দোলন নতুন করে গতি সঞ্চার করে। ব্রিটিশ বিরােধী মানসিকতা ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠে, স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত যা চলতেই থাকে।
৪) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন যে, ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড সমগ্র ভারতে এক মহা যুদ্ধের সূচনা করে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নারকীয় হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে নাইটহুড ঘৃণাভরে বর্জন করেন। গান্ধীজি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় লেখেন— “ This satanic Government cannot be mended, it must be mended.” ঐতিহাসিক গ্যারেট – টমসনের মতে “জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড সিপাহী বিদ্রোহের মত এর গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী ঘটনা।”
পরিশেষে বলা যায় যে, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড ভারতের অসহযােগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .