পাকিস্তানের বিভাজন ও বাংলাদেশের উত্থান
১৯৪৭ সালে যে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয় তার পশ্চিম অংশ পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব দিকের অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেশি হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের বঞ্চনার প্রেক্ষিতে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ জমা হতে থাকে।
পূর্ববঙ্গের প্রতি বঞ্চনা
পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা মহম্মদ আলি জিন্নাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। তারা মনে করতেন, পাকিস্তান গড়ে উঠলে হিন্দুদের অধীনতা মুক্ত হয়ে তারা স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ করতে পারবেন, যদিও বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিক বৈষম্য চাপিয়ে দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের দাবি পূরণের বিষয়ে পাক প্রশাসন উদাসীনতা দেখায়। ফলে বঞ্চনার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
ভাষা আন্দোলন
পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮.১৬ শতাংশ, পুরাে পাকিস্তানে ৫৬, ৪০ শতাংশ ছিল বাংলাভাষী। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে জিন্না উর্দুকে স্বীকৃতি দেন। এর ফলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ববঙ্গের সর্বত্র আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫২ সালে পাক পুলিশের গুলি চালনায় ভাষা আন্দোলনের ৪ সমর্থক প্রাণ হারান। এর পর দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালে পৃথক বাংলাদেশ রাষ্ট্র গড়ে ওঠে।
রাজনৈতিক বৈষম্য
পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তগত করে রেখেছিল। খাজা নজিমুদ্দিন, সুরাবর্দিকে নানা অজুহাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পূর্ববঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ছিল না বললেই চলে।
১৯৭০-এর দুর্যোগ
১৯৭০ সালে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৩ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়। এসময় ত্রাণকার্য পরিচালনায় পাক রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান তৎপর হননি বলে অভিযােগ। সেজন্য পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে।
মুজিবুর রহমানের উত্থান
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামি লিগ ১৬২টির মধ্যে ১৬০টি আসনে জয় পায়। দলনেতা শেখ মুজিবুর রহমানই সরকার গঠনের অধিকার পান। অবশ্য পূর্ব পাকিস্তানের কোনাে ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলি ভুট্টোর বিরােধিতায় মুজিবুরকে সরকার গড়তে বাধা দেওয়া হয়। ফলে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
ঐতিহাসিক ভাষণ
আওয়ামি লিগকে সরকার গড়তে না দেওয়ার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘটের ডাক দেন মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে মুজিবুর বলেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বাঙালি জাতির মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র উন্মাদনা।
গণহত্যা
২৫ মার্চ রাতে জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে পাক বাহিনী ব্যাপকভাবে বাঙালিদের হত্যা করে। এর পােশাকি নাম দেওয়া হয় অপারেশন সার্চলাইট’।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম
ওই দিন মধ্যরাতে শেখ মুজিবুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে স্বাধীনতার লক্ষ্যে শুরু হয় তীব্র গণ-আন্দোলন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়ানােয় বিপাকে পড়ে পাক সরকার। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরােরার কাছে আত্মসমর্পন করেন পাক বাহিনীর প্রধান জেনারেল এ কে নিয়াজি। এর ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .