১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চিনের কোয়াংসি প্রদেশে হুং-শিউ চুয়ানের নেতৃত্বে তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। তাইপিং বিদ্রোহ ছিল আধুনিক চিনের প্রথম গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। তাইপিং বিদ্রোহের অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছিল শেষপর্যন্ত এই বিদ্রোহ মাঞবংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে চিনে ধর্মরাষ্ট্র (Theoracy) প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু তা হয়নি, এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ
1. নৈতিক অবক্ষয়
তাইপিং নেতৃবৃন্দ তাদের ঘােষিত আদর্শ থেকে সরে গিয়ে বিলাসব্যাসনে নিমজ্জিত হলে বিদ্রোহের প্রাণশক্তি বিনষ্ট হয়। নৈতিক অবক্ষয় এই আন্দোলনের ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাইপিং নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাশ, একবিবাহ প্রথা, নারী পুরুষ সাম্য এসব নীতিগত আদর্শের কথা বললেও ব্যক্তিগত জীবনে তা মানেননি।
2. উপদলীয় সংঘাত
তাইপিং অনুগামীদের মধ্যে বিভিন্ন পরস্পরবিরােধী উপদলের সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। হুং-শিউ-চুয়ান, ইয়াং-শিউ-চিং প্রমুখের অন্তদ্বন্দ্ব এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য।
3. সামরিক শক্তি প্রয়ােগ
তাইবিং বিদ্রোহ যাতে গণবিদ্রোহের রূপ না নিতে পারে সে কারণে সরকার পক্ষ উদাসীন না থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়। সেং-কুয়াে-ফ্যানের নেতৃত্বে আঞ্চলিক স্বদেশরক্ষী সেনাদলগুলিকে উন্নত সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তােলার পাশাপশি আধুনিক অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী করে তােলা হয়। এই দক্ষ ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী সহজেই তাইপিং বিদ্রোহ দমন করে।
4. যােগাযােগের অভাব
তাইপিং আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য মা-বিরােধী আন্দোলনের কোনাে যােগাযােগ না থাকায় সরকারের পক্ষে এই আন্দোলন দমন করার সুবিধা হয়।
5. আদর্শগত বিরােধ
নেতৃবর্গের মধ্যে আদর্শগত বিরােধও এই আন্দোলনকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। তাইপিং বিদ্রোহীদের মা বিরােধী নীতি একদিকে যেমন বহু চিনাবাসীর সমর্থন লাভ করেছিল, অপরদিকে তেমন তাদের কনফুসীয় নীতির বিরােধিতা পন্ডিত থেকে কৃষক সকলের আস্থা হারিয়েছিল হিং নিজেকে যিশুর কনিষ্ট ভ্রাতা বলে প্রচার চালানােয় বিদ্রোহীদের সহানুভূতি হারান। তাই ইমানুয়েল স্যু বলেছেন, তাইপিংদের ধর্মীয় আদর্শ চিনা এবং পশ্চিমি উভয়কে সমানভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছিল।
6. আন্দোলন পরিকল্পায় ত্রুটি
তাইপিংদের সামরিক দুর্বলতা ও আন্দোলনের পরিকল্পনাগত ত্রুটি তাদের ব্যর্ততার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
7. কৌশলগত দুর্বলতা
তাইপিং বিদ্রোহীদের উচিত ছিল নানকিং দখলের পর আরও উত্তরে সরে গিয়ে পিকিং এবং মাণ্ডু রাজদরবারের দখল নেওয়া। ইয়াং সি নদীর দু তীরের মাণ্ডু সেনাশিবির ধ্বংসেও তারা ব্যর্থ হয়। এই সব কৌশলগত দুর্বলতা শেষ পর্যন্ত তাইপিং বিদ্রোহকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে। তাইপিং সরকার বিদেশিদের কিছু সুবিধাদানের পরিবর্তে তাদের সাহায্য লাভ করতে সম্মত ছিল না। অথচ সেই বিদেশিদের বিশেষ করে ব্রিটেনের সাহায্য নিয়েই মা সরকার যে কৌশল অবলম্বন করে, তাই শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .