তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধের গুরুত্ব
১৭৬১ খ্রিঃ তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ আফগান শাসন আহম্মদ শাহ আবদালির সঙ্গে মারাঠা পেশােয়া বালাজি বাজীরাও-এর মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ মরাঠাদের শােচনীয় পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের গুরুত্ব অসীম। যদিও এই যুদ্ধে গুরুত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। মারাঠা ঐতিহাসিক সরদেশাইয়ের মতে এই যুদ্ধ ছিল একটি সাময়িক বিপর্যয়। পক্ষান্তরে ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার এই যুদ্ধকে “মারাঠাদের জাতীয় বিপর্যয়” রূপে চিহ্নিত করেছেন।
তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ নিয়ে যাই মতপার্থক্য থাকুক না কেন, এই যুদ্ধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
প্রথমত :
এই যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয়, বহু মারাঠা সৈন্যের মৃত্যু ও সম্পদের বিনাশ ঘটেছিল। এই যুদ্ধে মারাঠাদের বিপর্যয়ের সংবাদ এক বণিক পেশােয়াকে পরিবেশন করে বলেন “Two peoples have been dissolved, twenty two gold mohors have been lost, and of the silver and copper the total cannot be cast up.” এককথায় বলা যেতে পারে এই যুদ্ধ মারাঠাদের কাছে ছিল অপূরণীয় ক্ষতি।
দ্বিতীয়তঃ
এই যুদ্ধ ভারতে মারাঠা সাম্রাজ্যের অগ্রগতি বা গঠনের প্রক্রিয়ায় চরম আঘাত করেছিল। উপরন্তু এই যুদ্ধ মারাঠা সংঘের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।
তৃতীয়তঃ
তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধের ফলে মারাঠাদিগের বস্তুগত ক্ষতি অপেক্ষা মানসিক বিপর্যয় আরও ক্ষতিকর হয়েছিল। পেশােয়ার সম্মান যেমন ম্লান হয়ে গিয়েছিল। তেমনই মারাঠা Confederacy-র সংহতি বিনষ্ট হয়েছিল। এই দুর্বলতার প্রকাশ মােটেই সুখপ্রদ ছিল না। মারাঠারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তারা ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বেকার অবস্থায় আর কখনাে উন্নীত হতে পারেনি।
চতুর্থতঃ
এই যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ ভারতে হায়দার আলি ও ভারতে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উত্থানের পথ প্রশস্ত করেছিল। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে, “If plasscy had sown the seeds of British supremecy in India, Panipath, afforded time for their maturing and striking roots.”
পরিশেষে বলা যায় যে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ছিল মারাঠাদের কাছে এক বিপর্যয় স্বরূপ এবং ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণকারী একটি যুদ্ধ।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .