তালিকোটার যুদ্ধের গুরুত্ব
দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বের শেষদিকে দক্ষিণ ভারতে। বিজয়নগর (১৩৩৬ খ্রি.) নামে একটি হিন্দু রাজ্য এবং বাহমনি (১৩৪৭ খ্রি.) নামে। একটি মুসলিম রাজ্যের উত্থান ঘটে। এই রাজ্য দুটির মধ্যে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে। তালিকোটার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল—
বিজয়নগরের পরাজয় :
বাহমনি রাজ্য ভেঙে বিজাপুর, গােলকুণ্ড, আহম্মদনগর, বেরার ও বিদর প্রভৃতি যে পাঁচটি রাজ্যের উত্থান ঘটে তাদের সম্মিলিত বাহিনীর। কাছে (একমাত্র বেবার বাদে) ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে তালিকোটার যুদ্ধে বিজয়নগর। চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। ড. ঈশ্বরী প্রসাদ তালিকোটার যুদ্ধকে বিজয়নগরের। মৃত্যু-ঘন্টা’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিজয়নগরের পতন :
আহম্মদনগরের সুলতান হুসেন নিজাম শাহ নিজের হাতে। বিজয়নগরের পরাজিত মন্ত্রী রাম রায়কে হত্যা করেন। এরপর থেকে বিজয়নগরের গৌরব ও প্রতিপত্তি ধ্বংস হয়ে রাজ্যটি ক্রমে পতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। বিজয়নগরের পতনের পর দাক্ষিণাত্যে দীর্ঘদিন কোনাে হিন্দু শক্তির উত্থান সম্ভব।
নির্বিচার হত্যা :
প্রায় এক লক্ষ হিন্দু এই যুদ্ধে নিহত হয় বলে ফেরিস্তা উল্লেখ করেছেন। ধ্বংস ও হত্যালীলা সম্পর্কে A Forgotten Empire’ গ্রন্থে Sewll লিখেছেন যে, শত্রুপক্ষ… নির্দয়ভাবে হিন্দুদের হত্যা করেছে, মন্দির, দেবমূর্তি ও প্রাসাদ ধ্বংস করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ধ্বংসলীলা সম্ভবত কখনাে ঘটেনি।
সীমাহীন দুর্দশা :
বিজয়ী মুসলিম রাজ্যগুলির সম্মিলিত বাহিনী পাঁচ মাস ধরে বিজয়নগরে ব্যাপক লুণ্ঠন চালায়। সেনারা বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়। বিজয়নগরের সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুঃখদুর্দশা ভােগ করে। সমগ্র বিজয়নগর ধ্বংসস্তুপে পরিণত
মােগল আধিপত্য :
বিজয়নগরের পতনের পরবর্তীকালে পাঁচটি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যেও বিরােধ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে তাদের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং দাক্ষিণাত্যে মােগল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .