অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্য ছিল মধ্যযুগের পৃথিবীর ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী সাম্রাজ্য। সপ্তদশ শতকে এই সাম্রাজ্যের মর্যাদা চূড়ান্ত শিখরে পৌছায়, আবার এই সময় থেকেই অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্বলতাগুলি প্রকট হয়ে ওঠে। অষ্টাদশ শতকে এই দুর্বলতা চরমে পৌছায়।
অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ
ঐক্যের অভাব
অটোমান সাম্রাজ্য বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল। ফলে এই সাম্রাজ্যে কোনাে ধরনের শাসনতান্ত্রিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি। বৃহত্তর এই সাম্রাজ্যে একসময় তুর্কি জাতির লােকই সংখ্যালঘিষ্ঠ হয়ে নিজ দেশে বিদেশিদের মতাে বসবাস করতে বাধ্য হয়।
রাজপরিবারের ত্রুটি
তুর্কি রাজপরিবার অটোমান সাম্রাজ্যকে নিজেদের পারিবারিক সম্পত্তি বলে মনে করত। এর ফলে তারা সাম্রাজ্যের কোনাে ত্রুটিবিচ্যুতি দূর করার প্রয়ােজন বােধ করত না।
অর্থনৈতিক দুর্বলতা
অটোমান সাম্রাজ্যে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনাে অগ্রগতি হয়নি। শিল্প-বাণিজ্য সবই চলে গিয়েছিল ইউরােপীয়দের হাতে। ফলে সাম্রাজ্যের অনৈতিক অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল।
সামরিক ত্রুটি
অর্থনৈতিক দুর্বলতা অটোমান সাম্রাজ্যের সামরিক ক্ষেত্রকেও প্রভাবিত করেছিল। একদা যে জানিসারি বাহিনী একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছিল বর্তীকালে তারা বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ইউরােপের সামরিক বাহিনীতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধরীতির প্রচলন ঘটলেও অটোমান সম্রাটগণ সামরিক বাহিনীতে তা প্রচলন না করায় সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি ক্রমে হ্রাস পায়।
সুলতানদের অযােগ্যতা
অটোমান সাম্রাজ্য সুলতানদের ব্যক্তিগত যােগ্যতা ও সামরিক শক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যে কোনাে ধর্মীয় বা শাসন বিষয়ক ঐক্য গড়ে ওঠেনি! এরকম পরিস্থিতিতে পরবর্তীকালে একের পর এক দুর্বল ও অযােগ্য শাসক অটোমান সিংহাসন দখল করলে সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে।
উপসংহার
এরূপ অবস্থায় খ্রিস্টান প্রধান ইউরােপ, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের আক্রমণ অটোমান সাম্রাজ্যের পতনকে অনিবার্য করে তােলে। শেষ পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুরস্কের জাতীয়তাবাদী নেতা কামাল আতাতুর্ক বা কামাল পাশা সর্বশেষ অটোমান সুলতান ষষ্ঠ মহম্মদকে (১৯১৮-১৯২২ খ্রি.) সিংহাসনচ্যুত করে (১লা নভেম্বর, ১৯২২ খ্রি.) তুরস্কে প্রজাতন্ত্র ঘােষণা করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .