Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মারাঠা শক্তির পতনের কারণ উল্লেখ করাে।

মারাঠা শক্তির পতনের কারণ

১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পর মারাঠা শক্তি পুনরুত্থান শুরু হয়। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের এক বিশাল অংশে মারাঠা প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়— এমনকী স্বয়ং মােগল সম্রাটও তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ইংরেজদের আবির্ভাবে মারাঠা অগ্রগতি প্রতিহত হয় এবং ইংরেজদের আক্রমণের ফলেই তাদের পতন ঘটে।

(১) মারাঠা রাজ্যের অন্তর্দ্বন্দ্ব :

মারাঠা রাষ্ট্র কোনও সুসংহগত ও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র ছিল। ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার বলেন যে, তাদের ঐক্য ছিল সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিম ও আকস্মিক এবং সেই কারণেই সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। মধ্যভারতের এক বিশাল অংশে মারাঠা আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলেও, মারাঠা রাজ্যকে একটি শক্তি সংঘ ব্যতীত অন্য কিছু বলা যায় না। ইন্দোরে হােলকার, নাগপুরে ভোসলে, বরােদয় গাইকোয়াড়, গােয়ালিয়রে সিন্ধিয়া এবং ধার অঞ্চলে পাওয়ার বংশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বংশগুলি আইনত পেশােয়ার কর্তৃত্বাধীন হলেও তারা পেশােয়াকে আমল না দিয়ে কার্যত স্বাধীনভাবেই রাজত্ব চালাত এবং তারা সর্বদাই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকত।

(২) নেতৃত্বের বদল :

প্রায় একই সময়ে পর কয়েকজন যােগ্য নেতা— যথা অহল্যাবাঈ, তুকোত্ত হােলকার, নানা ফড়নবীশ, মাহাজী সিন্ধিয়া প্রমুখ দূরদর্শী ও বিচক্ষণ মারাঠা নেতার মৃত্যু মারাঠা রাষ্ট্রে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে। পরবর্তী প্রজন্মের সব নেতার আবির্ভাব হয়, তাঁরা ছিলেন অপদার্থ, অকর্মণ্য, স্বার্থপর হীনমন্য ও ইন্দ্রিয়াসক্ত। জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কে উদাসীন এই সব স্বার্থ নেতাদের উত্থান মারাঠাদের পতনকে সুনিশ্চিত করে তােলে। ইংরেজদের কূটনীতির কাছেরা নাবালক ছিলেন। এলফিনস্টোন বলেন যে, “একটি সফল যুদ্ধ চালানাের জন্য সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র সবই মারাঠাদের ছিল। তাদের সব কিছুই তৈরি ছিল। তাদের কেবল একজন নেতার অভাব ছিল।”

(৩) আদর্শবাদের প্রভাব :

স্যার যদুনাথ সরকারের মতে, মারাঠা রাষ্ট্রের পশ্চাতে কোনও আদর্শ বা নৈতিক ভিত্তিক ছিল না। মারাঠা প্রশাসন ছিল দুর্নীতিগ্রস্থ উৎকোচ, গুপ্তহত্যা, শােষণ মারামারি প্রভৃতি এর সাধারণ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। মারাঠা রাজন্যবর্গ ‘হিন্দু-পাদ-পাদশাহী। আদর্শ ত্যাগ করে হিন্দু রাজন্যবর্গের ওপর আক্রমণ, হিন্দু রাজ্য লুণ্ঠন এবং বলপূর্বক ‘চৌথ’ ও ‘সরদেশমুখী’ আদায়ের নীতি গ্রহণ করলে মারাঠা শাসন তার নৈতিক ভিত্তি এবং উত্তর ভারতের হিন্দু জনসাধারণের শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে।

(৪) অর্থনৈতিক দুর্বলতা :

পর্বতসঙ্কুল ও অনুর্বর মহারাষ্ট্রের কৃষিব্যবস্থা উন্নত ছিল। মারাঠা নেতৃমণ্ডলী শিল্প-বাণিজ্যের উন্নতি ঘটিয়ে সুদৃঢ় অর্থনীতি গড়ে তােলার কোনও চেষ্টা করে নি। এই অবস্থায় প্রতিবেশী রাজ্য থেকে বলপূর্বক ‘চৌথ’ ও ‘সরদেশমুখী আদায় করে তারা তাদের আর্থিক ঘাটতি পূরণ করত। এই দু’টি কর আদায় করার জন্য তাদের বিশাল সেনাবাহিনী রাখতে হত, যাদের বেতন দেওয়াই ছিল এক কঠিন সমস্যা। বেতনের অভাবে সেনাদল প্রায়ই বিদ্রোহ ঘােষণা করত। সামন্ততন্ত্র। শাসিত মহারাষ্ট্রে কৃষকদের অবস্থা ছিল শােচনীয়। পেশােয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হন এবং প্রজারা পেশােয়ার বিরােধী হয়ে ওঠে। এইসব অর্থনৈতিক দুর্বলতা মারাঠাদের পতনের পথকে প্রশস্ত করে।

(৫) সামাজিক অবক্ষয় :

মারাঠা সমাজ ব্যবস্থার চূড়ান্ত অবক্ষয় এবং জনসাধারণের মধ্যে প্রগতিশীল শিক্ষা ও মূলবােধ প্রসরে নেতৃমণ্ডলীর অনীহা মারাঠা শক্তির পতনের অন্যতম কারণ। আর.ভি, নাদকাৰ্নী-রমতে, সামাজিক অনগ্রসরতা ও অবক্ষয়ের মধ্যেই মারাঠাদের পতনের কারণ লুকিয়ে আছে। মদ্যপান, ইন্দ্রিয়শক্তি ও নৈতিক অধঃপতন সামাজিক পরিবেশকে কলুষিত করেছিল। মারাঠা নেতৃমণ্ডলীও এই দোষগুলি থেকে মুক্ত ছিলেন না। এছাড়া, নানা ধরনের কুসংস্কার, ডাইনিপ্রথা, বহুবিবাহ, শিশুবিবাহ, জৌতিষের প্রতি প্রবল আস্থা সামাজিক অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

(৬) বর্ণপ্রথা :

মারাঠা রাষ্ট্রে কোনও সামাজিক সংহতি ছিল না এবং এই সামাজিক সংহতির পথে প্রধান প্রতিবন্ধক ছিল বর্ণপ্রথা। ব্রাত্মণদের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব করা হত বলে পেশােয়ার সরকারকে অনেকে ব্রাক্ষ্মণ-রাজ’ বলে অভিহিত করেন। ঐতিহাসিক রাণাড়ে বলেন যে, অষ্টাদশ শতকে প্রধান সেনা নায়কদের নিযুক্তির ক্ষেত্রে যােগ্যতা নয়— গােষ্ঠী ও বর্ণহ প্রধান বিবেচ্য।

(৭) সামরিক দূর্বলতা :

মারাঠা রাষ্ট্রের সামরিক ভিত্তিও ছিল দুর্বল। পেশােয়াদের শাসনাধীনে মারাঠা সেনাদল তার জাতীয় চরিত্র হাৱাৰা। ঊত্তর ভারতীয় হিন্দু-মুসলিম, তেলেগুভাষী মানুষ, গােয়র টান অধিবাসী ও আরবদের নিয় গঠিত মারাঠা সেনাদল ছিল কার্যত একটি বজাতীয় সংগঠন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষদের নিয়ে গঠিত এই সেনাদলে কোনও ঐক্য বা সংহতি ছিল না। ডঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন-এর মতে মারাঠাদের চূড়ান্ত পতনের জন্য সামরিক বাহিনীর জাতীয় চরিত্রনাশই সর্বাপেক্ষা বেশি দায়ী ছিল।

Leave a reply