Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

চিনে বক্সার বিদ্রোহের কারণ বা পটভূমি কারণ লেখাে ?

চিনে বক্সার বিদ্রোহের কারণ বা পটভূমি কারণ লেখাে ?

চিনে বক্সার নামে এক গুপ্ত সমিতি ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বিদেশি হটানাের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে তােলে, তা বক্সার বিদ্রোহ নামে পরিচিত। চিনের ইতিহাসে বক্সার বিদ্রোহ ছিল প্রথম জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ বিদ্রোহীদের শ্লোগান ছিল – রাজবংশকে রক্ষা করাে, বিদেশিদের উচ্ছেদ করাে।

চিনে বক্সার বিদ্রোহের কারণ

1. বিদেশি আধিপত্য

বিভিন্ন বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চিনে উন্নত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের নামে দীর্ঘদিন ধরে শােষণ, লুণ্ঠন চালায়। ১৮৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই সব বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চিনকে বহুবিভক্ত করে নিজেদের প্রভাব আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে চিনারা স্বাভাবিকভাবেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। চরম সংস্কারপন্থী নেতা কাং-ইউ-ওয়েই জাতীয় সুরক্ষা সমিতির এক ভাষণে বলেন এভাবে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ চলতে থাকলে চিন শিঘ্রই বার্মা, আম্মান, ভারত বা পােল্যান্ডের মতােই স্বাধীনতা হারাবে।

2. বিদেশি শক্তির আর্থিক শােষণ

বিদেশি শক্তিবর্গের তীব্র আর্থিক শােষণের বলি হয়েছিল চিন। আফিম যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে চিনা বন্দরগুলি বিদেশি শক্তিগুলির সামনে খুলে দেওয়া হলে গােটা চিন বিদেশি পণ্যে ছেয়ে যায়। চিনের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদেশি বস্তুসামগ্রী চিনা বস্ত্রের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কম দামে বিক্রয় হওয়ার ফলে চিনের দেশীয় বস্ত্রশিল্প ধ্বংস হয়। যার পরিণামে সৃষ্টি হয় তীব্র আর্থিক সংকট। এই আর্থিক সংকট মােচনের জন্য কর বৃদ্ধি করা হলে শ্রমিক, কৃষক ও কারিগর শ্রেণি করভার থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতিতে যােগ দেওয়া ও বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে।

3. খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে অসন্তোষ

তিয়েন-সিং চুক্তির পর থেকেই চিনে অবাধে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অনুমতি পায় বিদেশিরা। পিকিং কনভেনশনের (১৮৬০ খ্রি.) মাধ্যমে মিশনারিরা চিনে জমি কিনে বা লিজ নিয়ে গির্জা গঠনের অধিকার পায়। এ ছাড়াও বিদেশি শক্তিবর্গ অর্থের লােভ দেখিয়ে বহু চিনাকে খ্রিস্টধর্মের অনুপ্রবেশকে কুনজরে দেখেছিল । চিনা ধর্মীয় প্রতিনিধিরা খ্রিস্টধর্মকে চিনের প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধচারণকারী ধর্ম বলে মনে করতেন।

4. জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও কৃষি সংকট

উনিশ শতকের শেষ লগ্ন থেকে চিনে ব্যাপকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে কৃষি জমির পরিমাণ না বাড়ায় এবং উন্নতমানের সার, বীজ বা প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়ােগ ঘটায় কৃষিক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়। এই সংকটময় অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কৃষক সম্প্রদায় বক্সার বিদ্রোহে যােগ দেয়।

5. প্রাকৃতিক বিপর্যয়

চিনে পীত (Yellow) নদী হুনান থেকে সান্টুং এর দিকে গতিপথ পরিবর্তন করলে সেখানে বন্যা দেখা দেয়। এই বন্যায় সান্টুং প্রদেশের সেচুয়ান, কিয়াং-সু, কিয়াং-সি, আনহুই প্রভৃতি অঞল ক্ষতিগ্রস্ত হয় (১৮৯৮ খ্রি.) পরের বছর উত্তর চিনের বিস্তীর্ণ অঞল জুড়ে মারাত্মক খরায় চিনবাসীর অবস্থা সঙ্গিন হয়ে পড়ে। চিনের কুসংস্কারগ্রস্ত পন্ডিত ও রাজপুরুষেরা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য বিদেশিদের ও খ্রিস্টধর্মের কু-প্রভাবকে দায়ী করেন।

6. বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির ভূমিকা

প্রাথমিকের মা-বিরােধী গুপ্ত সমিতি শ্বেত পদ্ম’এর অনুকরণে গড়ে ওঠে ‘আই-হাে-চুয়ান’নামক গুপ্ত সমিতি, যা বিদ্রোহে মদত দেয়। সান্টুং প্রদেশের বৃহৎ তরবারি সমিতি (১৮৯৮ খ্রি., মার্চ) বিদেশিদের এবং বিশ্বাসঘাতক চিনাদের হত্যা করার পরিকল্পনা নেয়।

উপসংহার

বক্সার বিদ্রোহ চিনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন সূচিত করে। এই বিদ্রোহের পরেই মা বংশের পতন ত্বরান্বিত হয় ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। ফেয়ার ব্যাঙ্কের মতে – বক্সার বিদ্রোহ ছিল সমগ্র চিনবাসীর জীবনে এক ঘনীভুত সংকটের প্রত্যক্ষ উত্তর।

Download PDF

Please wait..
If the download didn’t start automatically, click here.

Leave a reply