শিক্ষা বিজ্ঞানে প্রযুক্তি
শিক্ষাতে বা শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তি বলতে প্রযুক্তিবিদ্যা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন সেবামূলক কাজ দেয়, তেমনই শিক্ষাক্ষেত্রে কি কি সেবামূলক কাজ দেয় তা বোঝায়। আমরা যেমন বলে থাকি কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি, শিল্পক্ষেত্রে প্রযুক্তি-তেমনই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি। এই অর্থে শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিমূলক যে সমস্ত যান্ত্রিক শক্তি বা উপকরণাদি ব্যবহার করি যেমন দৃশ্য শ্রাব্য উপকরণ (Audio visual aids), হার্ডওয়ার ও সফ্টওয়ার ইলেকট্রনিক কৌশল ইত্যাদিকে বোঝায়।
শিক্ষা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিকে সংযোগ করার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা উপকরণগুলির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে, শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষণীয় বিষয়গুলিকে যেমন সহজলভ্য করে তুলেছে তেমনি সুশিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক আগ্রহ বেড়েছে। শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিকে সংযোগ ঘটানোর ফলে যেদিকগুলিতে সফলতা এসেছে সেগুলি হ’ল-
বিষয়বস্তু উপলব্ধিতে সহায়তা :
শিক্ষক মহাশয় যখন শ্রেণী শিখনে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করছেন তখন তিনি উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ (দূরদর্শন, ডি.ভি.ডি., ফ্লিমস্টিপ, প্রজেক্টার, ইন্টারনেট, বেতার, চলচিত্র প্রভৃতি) সাহায্যে শিক্ষার্থীদের উপলব্ধিতে সহায়তা করবেন। শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষণের ফলে বিষয়বস্তু সহজেই বোধগম্য হয়ে থাকে এবং শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বেশি পরিমাণ বিষয়বস্তু উপলব্ধিতে সহায়তা :
শ্রেণীশিক্ষণে প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে শিক্ষক বেশি পরিমাণ বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে থাকেন। ফলে শিক্ষণে প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে বিষয়বস্তু অল্প সময়ে শিক্ষার্থীগণ উপলব্ধি করে তাই শিক্ষক পরবর্তী সময়ে আরো নতুন বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। এর পলে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তু অনুশীলনের অনেক সুযোগ পায়।
বিষয়বস্তু সহজলভ্য :
শিক্ষায় প্রযুক্তি আসার ফলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু সহজেই পাওয়া সম্ভব। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম ভিত্তিক বিষয়বস্তু, গবেষকের নানা তথ্য, অধ্যাপক ও শিক্ষক মহাশয়গণ সহজেই নানা বিধ জার্নাল সহজেই পেয়ে থাকেন। এর দ্বারা শিক্ষা ব্যবস্থার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
জ্ঞানের সমৃদ্ধিতে সহায়তা :
শিক্ষক মহাশয় এই প্রযুক্তির সাহায্যে শিক্ষণীয় নানা বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন ফলে তিনি মেধা সমৃদ্ধ হন, সেই জ্ঞান শিক্ষার্থীর মধ্যে সঞ্চালিত করেন। ফলে শিক্ষার সার্বিক মানের উন্নয়ন ঘটে।
সময়ের অপচয় হ্রাস :
শিক্ষা বিজ্ঞানে প্রযুক্তি সংযোগের ফলে সময়ের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক মহাশয় শ্রেণী শিখনে প্রযুক্তির সাহায্যে শিখন দেওয়ার ফলে অল্প সময়ে শিখন কার্য সম্পূর্ণ হয় পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষার্থীগন অনুশীলন, প্রশ্নউত্তর প্রভৃতি করার সুযোগ পায়।
গবেষকের ক্ষেত্রে সুবিধা :
গবেষক অল্প সময়ে বাড়িতে কিংবা গবেষণাগারে বসে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এর ফলে সময়ের যেমন হ্রাস ঘটেছে তেমনি অর্থেরও সাশ্রয় হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণে :
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নানা শ্রেণী অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে সংরক্ষিত করে রাখা সম্ভব, তেমনি প্রয়োজনে কোন শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রদান করাও সম্ভব। পূর্বে যখন প্রযুক্তি ছিল না তখন এত দ্রুত তথ্য প্রদান ও তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হত না।
বিষয়বস্তু মূর্তনের ক্ষেত্রে :
শিক্ষা বিজ্ঞানে প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়েছে কারণ প্রযুক্তির সাহায্যে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করলে তা শিক্ষার্থীদের কাছে মূর্ত হয়ে ওঠে। ফলে বিষয়বস্তু সহজে হৃদয়ঙ্গম হয়ে থাকে। যেমন মরু অঞ্চলের জীবন প্রণালী যতই আমরা বর্ণনার মাধ্যমে উপস্থাপন করিনা কেন সেক্ষেত্রে বিষয়বস্তু যতটা মূর্ত হবে তার চেয়ে বেশি মূর্ত হবে যদি কোনো প্রযুক্তি অর্থাৎ দূরদর্শন কিংবা ফ্লিমস্ট্রিপ বা প্রজেক্টরের সাহায্যে উপস্থাপন করা যায়।
তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে :
শিক্ষার্থীদের নান তথ্য নিয়ে মূল্যায়ন করতে হলে সংরক্ষিত তথ্য গুলিকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। সাধারণত রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে তথ্যগুলি বিশ্লেষণ করতে গেলে সময় ও পরিশ্রম অধিক প্রয়োজন হয়। বর্তমানে প্রযুক্তির সাহায্যে কম্পিউটারে Softwere আপলোড করে নিমেষের মধ্যে রাশিবিজ্ঞানের সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়। তাই বলা যায় প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য গুলি অনেক সহজে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।
এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে শিক্ষা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির সংযোগ ঘটার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার্থীগণ স্ব-ইচ্ছায় প্রযুক্তির সাহায্যে জ্ঞানের যেমন বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে তেমনি শিক্ষার বিষয়বস্তুর মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .