ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই সেপ্টেম্বর শিকাগাের ‘বিশ্বধর্মসম্মেলনে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসাবে বিবেকানন্দ যােগদান করেন এবং বিশ্বের কাছে হিন্দুধর্মের মহত্ত্ব ও ভারতের মহান ঐতিহ্যের কথা বলিষ্ঠ প্রচার করেন। বিবেকানন্দের এই বিস্ময়কর অবদান দেশবাসীর মনে আত্মবিশ্বাস ও গৌরববােধ জাগিয়ে তুলেছিল।
পরাধনীতার নাগপাশে আবদ্ধ হতাশাক্লিষ্ট ভারতের জনগণকে তিনি তার মানবপ্রেম ও স্বদেশ প্রেমের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী, বল ভাই ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ধনী ও দরিদ্র, উচ্চ ও নীচ, নারী ও পুরুষ সবাই তার সহযােগিতায় নতুন এক ভারত গড়া ছিল বিবেকানন্দের স্বপ্ন, – যেখানে পাশ্চাত্যের কারিগরি বিদ্যার সঙ্গে প্রাচীন ভারতের জীবনদর্শের সুষ্ঠ সমন্বয় ঘটবে।
প্রকাশ্য রাজনীতিতে না নামলেও বিভিন্ন রচনার মাধ্যমে বিবেকানন্দ তৎকালীন ভারতের দরিদ্র, অস্পৃশ্যতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, জাতিভেদ, নারী নির্যাতন, ধর্মীয় বিরােধ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি তীব্র কষাঘাত হেনেছিলেন।
তিনি উপলব্ধি করেন যে, সমাজের নীচুস্তরেথাকা মানুষরাই হল দেশের প্রকৃত শক্তি – তথাকথিত নীচ জাতির উন্নতির মাধ্যমেই একদিন নতুন ভারত গড়ে উঠবে। এই জন্য তিনি বলেছেন, নতুন ভারত বেরুক লাঙ্গল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে, মেথর, ঝুপড়ির মধ্য হতে, বেরুক মুদির দোকান থেকে, বেরুক কারখানা থেকে, বাজার থেকে বেরুক ঝােপ-জঙ্গল পাহাড় পর্বত থেকে।
তার বিশ্বাস ছিল সাহসী ও শক্তিমান মানুষরাই কেবলমাত্র স্বাধীনতা অর্জন এবং তাকে রক্ষা করতে পারে। তিনি চেয়েছিলেন একদল খাঁটি মানুষ, যারা উচ্চ আদর্শ ও দেশের কল্যাণের জন্য মরণ পণ লড়াই করতে পারে। প্রকৃত মানুষ তৈরির উদ্দেশ্যেই ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি রামকৃয় মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রক্তাত্ব দিনগুলােতে স্বামী বিবেকানন্দের অগ্নিগর্ভ জাতীয়তাবাদী বাণী ও রচনা (যেমন-জ্ঞানযােগ, রাজযোগ, বর্তমান ভারত প্রভৃতি)ছিল দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবীদের নিত্যসঙ্গী।
সঙ্গত কারণেই তাই প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আর-জি প্রধান স্বামী বিবেকানন্দকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .