Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

আলাউদ্দিন খলজির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আলােচনা করাে

আলাউদ্দিন খলজির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা 

খলজি বংশের শেষ্ঠ সুলতান আলাউদ্দিন খলজিই সর্বপ্রথম সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক সংস্কারে মনােনিবেশ করেন। তার অর্থনৈতিক সংস্কারের মূলত দুটি দিক
লক্ষ করা যায়- (১) রাজস্ব সংস্কার ও (২) বাজারদর বা মূল্যনিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে বাজারদর বা মূল্যনিয়ন্ত্রণ ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ইতিহাসবিদ ড, নিজামি ‘সুলতানি যুগের শ্রেষ্ঠ প্রশাসনিক অবদান’ বলে উল্লেখ করেছেন।

আলাউদ্দিন খলজির বাজারদর নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য 

আলাউদ্দিন খলজি কী উদ্দেশ্যে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন তা নিয়ে পণ্ডিত ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। বাজারদর নিয়ন্ত্রণের কারণ হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ করা হয়

সেনাদলের স্বার্থ রক্ষা 

আলাউদ্দিন খলজি তার বিরাট সেনাদলের আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন বলে ড, এস. লাল, ড, পরমেশ শরণ প্রমুখ মনে করেন। সমকালীন ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বরনি বলেছেন যে, রাজ্যজয়, বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা ও মােঙ্গল আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য আলাউদ্দিনকে বিশাল। সেনাদল গঠন, সেনাদলের সাজসরঞ্জাম ও বেতন প্রদান, সীমান্ত অঞলে দুর্গ নির্মাণ প্রভৃতি কাজ করতে হয়। এই সমস্ত উদ্যোগে রাষ্ট্রের ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। ৫০ শতাংশ ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি এবং অন্যান্য নতুন কর আরােপ করেও এই ব্যয় সংকুলান সম্ভব হচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আলাউদ্দিন সেনাদের বার্ষিক বেতন ২৩৪ তঙ্কা নির্ধারণ করেন। ওই আয়ে যাতে সেনাদের ভরণপােষণের কোনাে অসুবিধা না হয় তার জন্য তিনি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন।

ধর্মীয় বিদ্বেষ 

অনেকে মনে করেন যে, আলাউদ্দিনের বাজারদর নিয়ন্ত্রণের প্রধান কারণ ছিল হিন্দুদের প্রতি তার ধর্মীয় বিদ্বেষ। সেই সময়ে ভারতের ব্যাবসাবাপিলে মূলত হিন্দুদেরই প্রাধান্য ছিল। অবশ্য ড, সতীশচন্দ্র প্রমুখ ইতিহাসবিদ ওই বক্তব্যের বিরােধিতা করেছেন। তাদের মতে, হিন্দুদের পাশাপাশি সেই সময় সুলতানি ও খােরাসানি বণিকরাও ব্যাবসাবাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল।

(১) জনজীবনে বিপর্যয় 

তৈমুরের নির্মম ও ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের ফলে প্রচুর মানুষ হিনত হয়। দিল্লির জনসংখ্যা ভীষণভাবে হ্রাস পায়। বাউনি লিখেছেন যে, যারা তৈমুরের হাত থেকে কোনােক্রমে রক্ষা পেয়েছিল তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রাণ হারায়।

(২) নৈরাজ্য সৃষ্টি 

তৈমুর লঙের আক্রমণের ফলে ভারতের জন্য জীবন ও ধনসম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়। তার ফলে ভারতে চারম তারাজকতা ও নৈরাজ্য থ্যে দেয়। তৈমুরের সেনাদল ভারতে বহু সুদৃশ্য মন্দির, অট্টালি
ফলে ভারতীয় শিল্পকলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(৩) ধনসম্পদ নির্গমন 

তৈমুরের ব্যাপক ধনরত্ন লুণ্ঠনের ফলে ভারতের বিপুল পরিমাণ সােনা, রূপা, মণি-মুক্তা ও অন্যান্য সম্পদ বিদেশে চলে যায়। ফলে ভারতের আর্থিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। অধ্যাপক সতীশচন্দ্র লিখেছেন যে, এই আমাণে হিন্দুস্থান নিঃস্ব হয়ে যায়। স্বর্ণ, রৌপ্য, মণি-মুক্ত প্রভৃতি প্রচুর ধনসম্পদ ভারত থেকে চলে যায়।

(৪) দুর্ভিক্ষ ও মহামারি 

তৈমুরের ব্যাপক ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশে মহামারি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাদ্যের অভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তৈমুরের হাত থেকে যারা কোনােক্রমে রক্ষা পেয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেই আনাহারে রাগ হারায়।

(৫) অনিশ্চিত ব্যবসাবাণিজ্যে 

তৈমুরের ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট চর নৈরাজ্যের ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

(৬) মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যােগসূত্র 

বহু সুদক্ষ ভারতীয় শিল্পী ও কারিগরকে তৈমুর স্বদেশে নিয়ে যান। ফলে ভারতের শিল্পথাপত্য মধ্য এশিয়ায় বিস্তারলাভ করে। পরবর্তীকালে মােঙ্গল নেতা বাবরের ভারত আক্রমণের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। তৈমুরের এই আক্রমণ।

(৭) সামাজিক ঐক্যে ভাঙন 

তৈমুর লঙ হিন্দুদের ধর্ম ও জীবনে যে ভয়ানক মনােভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরে। নৃশংস অত্যাচার চালান তাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলিমদের ওপর প্রচণ্ড বিরূপ

(৮) জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট 

তৈমুরের আক্রমণের ফলে সারা উত্তর ভারতে রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। এই সুযােগে বিভিন্ন প্রদেশ একে একে স্বাধীনতার ঘােষণা করে। ফলে ভারতের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয়। দিল্লির সাম্রাজ্য ক্ষুদ্র পণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে।

মূল্যায়ন 

সমকালীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় যে অনৈক্য ও দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল তা তৈমুরের ভারত আক্রমণের ফলে তাসের ঘরের মতােই ভেঙে পড়েছিল। রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ভারতে তৈমুরের আক্রমণ যে মরণ কামড় দিয়ে গিয়েছিল তার ক্ষত শুকাতে অন্তত দেড়শাে বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দেড়শাে বছর পর মােগল সম্রাট আকবর দিল্লির সিংহাসনে বসে (১৫৫৬ খ্রি.) সেই ক্ষত দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

আরো পড়ুন :- 

Leave a reply