১৯৩৪ খ্রিঃ মহম্মদ আলি জিন্না মুসলীম লীগের সভাপতি হন। কিন্তু ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে লিগ অধিকাংশ আসনে পরাজিত হয়। জিন্না প্রমুখ উপলব্দি করেন যে, মুসলমানদের সামনে সম্প্রদায় ভিত্তিক নির্দিষ্ট কর্মসূচি তুলে ধরা আবশ্যিক, অন্যথায় জাতীয় কংগ্রেস ভারতের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ওপর একচেটিয়া অধিকার কায়েম করবে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে লাহাের লীগের অধিবেশন বসে। এখানেই বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক বিখ্যাত লাহাের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
পাকিস্তান প্রস্তাব
লাহাের অধিবেশনে ফজলুল হক যে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন তা লাহাের প্রস্তাব’ নামে পরিচিতি পায়। এই প্রস্তাবে কোথাও পাকিস্তান’ শব্দটি উল্লিখিতনা থাকলেও পরবর্তী কালে এটি পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামেই বেশি প্রচারিত হয়। প্রস্তাবটির খসড়া রচনা করেন পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান এবং সমর্থন করেন চৌধুরি খালিক উজ্জামান। প্রস্তাবে বলা হয় ভারতের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও অন্যত্র মুসলমান প্রধান অঞ্চলকে নিয়ে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে জিন্না বলেন, “ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার একমাত্র সমাধান হল ভারত বিভাজন, লাহাের প্রস্তাব ক্রমে পাকিস্তান প্রস্তাবে পরিণত হয়। মহম্মদ আলি জিন্নার সচিব পিরজাদা একটি রচনায় জানান, জিন্না নাকি পরিহাস করে বলেছিলেন “পাকিস্তান শব্দ নাকি আমরা চালু করিনি, হিন্দুরাই শব্দটি আমাদের উপহার দিয়েছে।”
লাহাের প্রস্তাবের গুরুত্ব
ভারতে হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক ও ভারত বিভাগের প্রেক্ষাপটে লাহাের প্রস্তাবের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, জিন্না লাহাের প্রস্তাবের মাধ্যমে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের ঘােষণা করেন। আসলে তিনি এই প্রস্তাবকে সামনে রেখে ভারতীয় রাজনীতিতে একটা দর কষাকষি করতে চেয়েছিলেন। আয়েষা জালালের মতে, লাহােরে জিন্না কোনাে নির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখতে পারেন নি। আসলে তাঁর লক্ষ্য ছিল সমস্ত মুসলমান সমাজের একমাত্র মুখপাত্র হিসাবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরা। তথাপি লাহাের প্রস্তাব ছিল লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এই প্রস্তাব ছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষময় পরিণতি। ভারত বিভাগের নির্মম পূর্বাভাষ ছিল লাহাের প্রস্তাব (১৯৪০ খ্রিঃ)।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .