জায়গিরদারি ব্যবস্থা
মােগলযুগে ভারতের অর্থনৈতিক জীবনে জমিদার শ্রেণির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম এবং জমিদাররা ছিলেন এযুগের রাজস্ব ব্যবস্থার প্রধান ভিত্তি। মােগল যুগে যে জমির রাজস্ব সরকারি কর্মচারীরা প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করত তার নাম ‘খালিসা’। এই খালিসা জমির আয় সরকারি কোশাগারে জমা পড়ত। সরকার ভূমিরাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব নির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে অর্পণ করতেন। হস্তান্তরিত এই জমিকে বলা হত ‘জায়গির’ আর যাঁরা জায়গির ভােগ করতেন তাদের বলা হত ‘জায়গিরদার’। যাঁরা বেতনের পরিবর্তে জায়গির ভােগ করতেন তাদের বলা হত তনখা জায়গির। এছাড়া ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের নৃপতিগণ, বংশানুক্রমিক ভূস্বামী বা জমিদারগণ। বংশানুক্রমিক জমিদারগণ ‘ওয়াতন জায়গির’ নামে পরিচিত ছিল। মােগল আমলে জমিদার শ্রেণির স্তরভেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের পার্থক্য ঘটত। মালগুজারি জমিদারগণ চাষিদের কাছ থেকে ভূমিরাজস্ব আদায়ের বিনিময়ে ভূমিরাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশে পেতেন। খিদমৎগুজারি জমিদারগণ রাষ্ট্র ও অন্যান্য জমিদারদের মধ্যে যােগাযােগ বজায় রাখতেন। তিন চার বছর অন্তর জায়গির হস্তান্তরিত করা হত।
জায়গিরদারি সংকটের ফলাফল
জায়গির প্রথা ক্রমশ সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রথমত, জাহাঙ্গির থেকে ঔরঙ্গজেবের সময় পর্যন্ত মনসবদারদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও জায়গিরজমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়নি।ফলে অনেককে দীর্ঘকাল ধরে জায়গিরের জন্য অপেক্ষা করতে হত। ফলে এমতাবস্থায় মনসবদারদের মধ্যে গােষ্ঠীদ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়।
দ্বিতীয়ত, অনেক সময় মনসবদারদের চাহিদা মেটাবার জন্য ‘খালসা জমি থেকে জায়গির প্রদানের ফলে সরকারের রাজস্ব পরিমাণ হ্রাস পায় এবং রাষ্ট্রের আর্থিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
তৃতীয়ত, জায়গির হস্তান্তরিত হওয়ার কারণে ভীত সন্ত্রস্ত জমিদাররা যতদূর সম্ভব রাজস্ব আদায় করায় কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
চতুর্থত, অনেক সময় মনসবদারদের কর্মস্থল ও জায়গির না হওয়ায় তারা। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জায়গির ইজারা দিতেন। ইজারাদাররা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় রাজস্ব আদায় করার ফলে কৃষকরা বিদ্রোহ করত। পঞ্চমত, মনসবদারি ব্যবস্থার মধ্যে সামন্ততন্ত্রের বীজ নিহিত ছিল।
সুতরাং দেখা যায় জায়গির ব্যবস্থার ত্রুটি মােগল সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী ছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .