জায়গিরদারি সংকট
মােগল আমলে যেসব মনসবদারকে নগদ টাকার বেতনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি বা মহল দেওয়া হত, তারা জায়গিরদার নামে পরিচিত ছিলেন। বেতনের পরিবর্তে নির্ধারিত রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যেই জায়গিরদারদের অধিকার সীমাবদ্ধ থাকত। জায়গিরদারি ব্যবস্থা মােগল (মুঘল) শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল।
সংজ্ঞা
মােগল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই মূল্যবান ও অতিরিক্ত জায়গির লাভের আশঙ্কা মােগল অভিজাতদের মধ্যে গােষ্ঠীগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষের সৃষ্টি করে যা সামগ্রিকভাবে গােটা মােগল সাম্রাজ্যের ওপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করেছিল। মােগল আমলের এই ঐতিহাসিক সমস্যা জায়গিরদারি সংকট নামে পরিচিত।
জায়গিরদারি সংকটের কারণ
মােগল আমলে জায়গির সংকটের মূলে কয়েকটি কারণ ছিল। যথা-
(১) জায়গিরের তুলনায় জায়গিরদারদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমল থেকে জায়গিরের দাবিদার অভিজাতদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু বন্টনযােগ্য জায়গিরের সংখ্যা সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি, যা জায়গিরদারি সংকটের সৃষ্টি করে।
(২) উৎকৃষ্ট জায়গির লাভের জন্য দলাদলি
তিন-চার বছর অন্তর জায়গিরদারদের কে জায়গির থেকে অন্য জায়গিরে বদলি করা হত। উৎকৃষ্ট জায়গির লাভের জন্য মােগল অভিজাতদের মধ্যে দলাদলি চরমে ওঠে। শুরু হয় সম্রাট তােষণ। এমনকি দরবারে অবাধে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া চলতে থাকে। এর ফলে মােগল সাম্রাজ্য নানা দুর্নীতি ও অনাচার দেখা দেয়, যার ফলশ্রুতিতে মােগল সাম্রাজ্যের ভিত কেঁপে ওঠে।
(৩) রাজস্বের তারতম্য
মােগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সময় থেকেই বেশিরভাগ
জায়গিরের নির্ধারিত রাজস্ব (‘জমা’) এবং আদায়ীকৃত রাজস্বের (হাসিল’) মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পড়তে থাকে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও অনুর্বর জায়গির থেকে আদায়ীকৃত রাজস্বের পরিমাণ সবসময়ই শাস্তি পূর্ণ ও উর্বর জায়গিরের তুলনায় কম হত। এমতাবস্থায় ভালাে ও লাভজনক জায়গির লাভের জন্য সম্রাটকে প্রভাবিত করার চক্রান্তে তীব্র হয়ে ওঠে।
উপসংহার
জায়গিরের ওপর জায়গিরদারদের অধিকার স্থায়ী ছিল না। ফলে সব জায়গিরদারই চাইত অস্থায়ী জায়গির থেকে যথাসম্ভব বেশি রাজস্ব আদায় করতে। এসবের নটি ফল হল মােগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .