নীলনদ -এর তীরে গড়ে উঠেছিল সুপ্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা। সভ্যতাটি নানদিক থেকেই বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসে নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছে।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার নানা দিক
নীলনদের অপরিহার্যতা
নীলনদের তীরেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা। নীলনদ ছিল প্রাচীন মিশরবাসীর জীবনে আশীর্বাদ স্বরূপ।
সমাজ ব্যবস্থা
শ্রেণিবিভাজন
প্রাচীন মিশরের সমাজ ব্যবস্থায় তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল।
i) উচ্চ শ্রেণি : এই শ্রেণিভুক্ত ছিল রাজপরিবার, অভিজাত গােষ্ঠী, পুরােহিত গােষ্ঠী প্রভৃতি।
ii) মধ্য শ্রেণি : এই শ্রেণিভুক্ত ছিল বণিক ও কারিগর গােষ্ঠীর মানুষেরা।
iii) নিম্ন শ্রেণি : মূলত কৃষক ও ভূমিদাসেরা এই শ্রেণিভুক্ত ছিল।
নারীর অবস্থান
প্রাচীন মিশরের সমাজে নারীরা উচ্চমর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। সমাজের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই তারা পুরুষদের সমপর্যায়ভুক্ত ছিল।
অর্থনীতি
কৃষি, পশুপালন ও শিল্প-বাণিজ্যের ওপর মিশরের অর্থনীতি নির্ভরশীল ছিল।
কৃষি
নীলনদের উভয় তীরে উর্বর ভূমিতে কৃষিকাজ হতাে। এসময় গম, জব, তিসি, ভুট্টা, শাক-সবজি ও শণ প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হতাে।
পশুপালন
কৃষি ছাড়া আদিম মিশরীয়দের অপর জীবিকা ছিল পশুপালন। তাদের প্রধান প্রধান গৃহপালিত পশু ছিল ছাগল, ভেড়া, গােরু, শূকর প্রভৃতি।
শিল্প-বাণিজ্য
প্রাচীন মিশরে মৃৎশিল্প, কাচশিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প এবং নৌযান তৈরি শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। ইজিয়ান দ্বীপ, ক্রিট ছাড়াও সিরিয়া, ফিনিসিয়া, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশের সঙ্গে মিশরবাসী বাণিজ্য চালাত। বাণিজ্যের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে তারা তামা ও সােনার মুদ্রা ব্যবহার করত। তাদের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে প্রধান ছিল গম, লিনেন কাপড়, স্বর্ণালংকার, সুন্দর মৃৎপাত্র প্রভৃতি। আমদানি দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল উটপাখির পালক, হাতির দাঁত, ধাতুর অস্ত্র, মশলা, কাঠ, সােনা, রুপা প্রভৃতি।
সংস্কৃতি
সাহিত্য-ইতিহাস
(i) মৃতের বই : প্রাচীন মিশরীয়দের উল্লেখযােগ্য সাহিত্যগ্রন্থ ছিল মৃতের বই, প্যাপিরাস-এ লেখা। এই পুস্তকগুলিতে জাদুবিদ্যা, ধর্মীয় শ্লোক ও প্রার্থনা, ঔষধপত্র প্রভৃতি আলােচনা থাকত।
(ii) বর্ষপঞ্জি : প্রাচীন মিশরবাসী কৃষির প্রয়ােজনে চন্দ্ৰপঞ্জিকার উদ্ভাবন ঘটায়। চন্দ্রের অবস্থানের ভিত্তিতে তারা এই ধরনের পঞ্জিকা তৈরি করে।
(iii) লিপি : (a) রােজেটা পাথর : মিশর অভিযানকালে ফরাসি সম্রাট নেপােলিয়ানের সেনারা মিশরের রােজেটা নামক স্থান থেকে লিপি খােদিত এক পাথর আবিষ্কার করে। (b) পার্লেমাে পাথর ও ব্যাসল্ট পাথরের এই ফলকটিতে মিশরের রাজাদের রাজত্বকালের বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। (c) হায়ারােগ্লিফিক লিপি ও হায়ারােগ্লিফিক শব্দের সাধারণ অর্থ হলাে দেবভাষা বা পবিত্র ভাষা। মিশরবাসী সর্বমােট ৭৫০টি এই ধরনের চিত্রলিপির ব্যবহার জানত।
শিল্প
(i) পিরামিড় : প্রাচীন মিশরের অন্যতম স্থাপত্যকীর্তি হলাে পিরামিড। ফ্যারাও জোসের আমলে স্থাপত্যশিল্পী ইমহােটেপ সর্বপ্রথম পিরামিড তৈরির কৌশল আবিষ্কার করেন। মিশরের সর্ববৃহৎ পিরামিডটি হলাে খুফুর পিরামিড। মিশরের কায়রাের কাছে গিজেতে এটি তৈরি করান ফ্যারাও খিয়পস (খুফু)।
(ii) অন্যান্য থাপত্যকীর্তি : প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় পরের দিকে পিরামিডের বদলে বহু ধর্মমন্দির তৈরি হয়। এগুলির মধ্যে বিখ্যাত ছিল কানাক ও লাকজোরের মন্দির। মিশরের অপর উল্লেখযােগ্য শিল্প-নিদর্শন হলাে আবুসিম্বেল-এর মন্দির এবং বিশালাকার স্ফিংস’-এর মূর্তি।
বিজ্ঞান
প্রাচীন মিশরে গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি ঘটেছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মিশরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলাে মেটেরিয়া মেডিকা (Materia Medica) বা ওষুধের সূচি প্রস্তুতকরণ।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .