ভারতের মতো দেশে জাতীয় আয় পরিমাপের অসুবিধা
যে কোনো দেশের জাতীয় আয় পরিমাপের সময় কতকগুলি সাধারণ সমস্যা দেখা দেয়। তবে উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে অপেক্ষাকৃত বেশি সমস্যা বা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। এগুলি হলো—
কৃষকদের নিরক্ষরতা ও অজ্ঞতা
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ আসে কৃষি থেকে। কৃষিতে নিযুক্ত অসংখ্য কৃষকের অধিকাংশই নিরক্ষর, অজ্ঞ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তাই তারা যেমন কৃষি ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখে না অন্যদিকে তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে তারা প্রকৃত আয় গোপন রাখে বা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ফলে জাতীয় আয় সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় না। তাছাড়া কৃষক পরিবারের নিজেদের ভোগের জন্য উৎপাদনের যে একটা বড়ো অংশ ব্যয় হয় তার হিসাব তারা রাখে না। তাই ওই অংশের বাজার মূল্য না পাওয়ায় জাতীয় আয় পরিমাপ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
হিসাবে কারচুপি
বড়ো কৃষক পরিবারগুলি লেভি বা আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য হিসাবের কারচুপি করে। এতে সম্পূর্ণ আনুমানিক ধারণার ভিত্তিতে জাতীয় আয় নির্ধারণ করতে হয় যা যুক্তিসংগত নয়। তাছাড়া এই ধরনের দেশে কালো টাকার সমান্তরাল যে অর্থনীতি চলছে সেগুলির বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় সঠিকভাবে জাতীয় আয় পরিমাপ করা যায় না।
মূল্যায়নের অভাব
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি ভূস্বামীদের জমি চাষের জন্য যে খাজনা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয় তা মেটাতে এবং চাষের জন্য মহাজনি ঋণ মেটাতে তারা ফসলের একটা অংশ দিতে বাধ্য হয়, যার সঠিক তথ্য বা হিসাব পাওয়া যায় না। আবার অভাবের কারণে তারা কম দামে শস্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফলে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্যায়ন করা যায় না।
অসংগঠিত শিল্প
কৃষির মতো অসংগঠিত শিল্প ক্ষেত্রে নিযুক্ত ব্যক্তিদের আয়ের সঠিক হিসাব বা তথ্য পাওয়া যায় না। এতে জাতীয় আয় পরিমাপে অসুবিধা দেখা দেয়
বাজার বহির্ভূত উৎপাদন কার্যের মূল্য নিরূপণে সমস্যা
বাজার বহির্ভূত এমন অনেক কাজকর্ম আছে যেমন- গৃহবধূর নিজ সংসারের কাজকর্ম, শিক্ষকের নিজের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাদান, নিজের বাগানবাড়িতে নিজ ভোগের জন্য শাক-সবজির চাষ ইত্যাদির আর্থিক মূল্য নিরূপণ করা অসম্ভব বলে এদের মূল্য জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না।
বেআইনি কার্যকলাপ থেকে পাওয়া আয়ের সমস্যা
ফাটকাবাজি, চোরাকারবার, জুয়া খেলা ইত্যাদি বেআইনি কার্যকলাপ থেকে প্রাপ্ত আয়ের হিসাব গোপন থাকে বলে এর হিসাবও জাতীয় আয়ের মধ্যে ধরা হয় না।
মূল্যস্তরের পরিবর্তন
মূল্যস্তরের পরিবর্তন জাতীয় আয় পরিমাপে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
উপযুক্ত কর্মীর অভাব
জাতীয় আয় পরিমাপ করার জন্য যে সমস্ত ব্যক্তিকে নিযুক্ত করা হয়, তাদের অনেকেই অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। তারা আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা সহকারে কাজ করে না। অনেক সময় বাড়িতে বসেই আন্দাজে তথ্য বসিয়ে দেওয়ার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। এটাও সঠিক জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে একটা বড়ো অসুবিধা।
সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ জাতীয় আয় পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করলেও বিভিন্ন কারণে সঠিক ও নির্ভুল আয় পরিমাপ করা সম্ভব হয় না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .