-: মুঘল স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় :-
প্রকৃতি :- স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসে মুঘল যুগ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশিষ্ট শিল্প-বিশেষজ্ঞ ফার্গুসন-এর মতে, মুঘল স্থাপত্যকাৰ্যগুলিতে পারসিক প্রভাব স্পষ্ট। অপরপক্ষে অধ্যাপক হ্যাভেল বলেন যে, ভারতবর্ষ যুগ যুগ ধরে বহির্বিশ্বের নানা জাতি ও দেশের ভাবধারাকে সাদরে বরণ করেছে। মুঘল যুগে ভারতীয় স্থাপত্যে কিছু পারসিক প্রভাব পড়তেই পারে, কিন্তু মুঘল স্থাপত্যের মূল শিকড় ভারতীয় প্রথার মধ্যেই গাঁথা ছিল জন মার্শাল মুঘল স্থাপত্যের দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। যথা—
(১) ভারতীয় স্থাপত্যে কোনও একটি বিশেষ রীতি ছিল না, বিশাল ভারতবর্ষের এক এক অঞলে এক ধরনের শিল্পরীতি গড়ে ওঠে।
(২) সম্রাটের ব্যক্তিরুচির ওপরেও স্থাপত্যকার্য নির্ভরশীল ছিল। আধুনিক গবেষকদের মতে, মুঘল স্থাপত্য পারসিক ও ভারতীয় ভাবধারার সংমিশ্রণ।
মুঘল স্থাপত্যের বিবর্তন ঃ (১) বাবর ও বাবরের রাজত্বকাল অত্যন্ত স্বল্প হওয়ায় এরং তার অকাল মৃত্যুর জন্য তাঁর আমলে ভারতবর্ষে এমন কোন শিল্প-সৌধ নির্মিত হয়নি, যার দ্বারা বাবরের শিল্পানুরাগের প্রকৃত মূল্যায়ণ করা যেতে পারে। তার নির্মিত সৌধের মধ্যে আজ ও কালের নীরব সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে পানিপথের ‘কাবুলবাগ মসজিদ’ ও সম্বলের ‘জামা মসজিদ।
(২) হুমায়ুণ :- ভাগ্য-বিড়ম্বনা সত্ত্বেও হুমায়ুণ কতকগুলি সৌধ নির্মাণ করেন। তার মধ্যে পারসিক রীতির অনুকরণে নির্মিত ফতেহাবাদের মসজিদ এবং ‘দিনপনাহ’ নামে একটি নগর নির্মাণের পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন দিল্লিতে।
(৩) শেরশাহ ঃ শেরশাহের সময়ের স্থাপত্য-শিল্পগুলিকে সময়ের বিচারে মুঘল স্থাপত্য যুগের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। শেরশাহ ছিলেন সুলতানি যুগের ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্যরীতির সঙ্গে মুঘল যুগের ইন্দো-পারসিক স্থাপত্যরীতির যােগসূত্র। শেরশাহের স্থাপত্য প্রতিভার নিদর্শন পাওয়া যায় বিহারের সাসারামে নির্মিত ও তাঁর রাজনৈতিক কর্মকেন্দ্র দিল্লিতে। শেরশাহের দিল্লিতে স্থাপত্যের মধ্যে। পুরান কিল্লা’ বিখ্যাত। এছাড়া তিনি দিল্লিতে ‘কুইলা-ই-কুহনা’ নামে এক মসজিদ নির্মাণ করেন। তার স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল—সাসারামে নির্মিত তার নিজের সমাধিভবন। এই সমাধি সৌধে হিন্দু বৌদ্ধ ইসলামী রীতির এক অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়।
(৪) আকবর :- আকবরের আমল থেকেই মুঘল স্থাপত্য শিল্পের প্রকৃত সূচনা হয়। তার আমলের শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্যই ছিল ভারতীয় ও পারসিক শিল্পরীতির মিশ্রণে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ। তার আমলের স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শনগুলি হল—(ক) হুমায়ুণের সমাধিসৌধ, (খ) আগ্রা দূর্গ, (গ) ফতেপুর সিক্রির সৌধরাজি। লালবর্ণের মর্মর পাথরে নির্মিত ফতেপুর সিক্রির স্থাপত্যে হিন্দু ও ইসলামীয় স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ দেখা যায়। (ঘ) সেকেন্দ্রায় নির্মিত আকবরের সমাধি সৌধের পরিকল্পক তিনি নিজেই। (৫) জাহাঙ্গির ও জাহাঙ্গিরের আমলে নির্মিত স্থাপত্যসৌধ গুলি হল লাহােরের সমাধি সৌধ,
Comment ( 1 )
Very Thankful