ক্লীপস্ মিশন ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলে কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে এক সুস্পষ্ট পরিবর্তন দেখা দেয়। কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে সহযােগিতার সম্ভাবনা না থাকায় ভারতের সর্বত্র এক উত্তেজনার পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ১৯৪২ খ্রিঃ জাপানের কাছে ইংরেজদের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পরাজয় অনেক ভারতীয়র মনে এমন ধারণার সৃষ্টি করেছিল যে ইংরেজ হেরে যাবে এবং তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে যাবে। গান্ধিজিও প্রথমে এই ধারণা থেকে উন্মুক্ত ছিলেন না। কংগ্রেসের অনেকের ধারণা হয়েছিল যে এই ফাঁকে ভারতের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হবে। ক্লীপস প্রস্তাবে ইংরেজ সরকার ভারতীয়দের স্বাধীনতার দাবীকে অস্বীকার করায় কংগ্রেস নেতারা ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। সারা দেশের সঙ্গে গান্ধীজীও নৈরাশ্য বােধ করেন। গান্ধীজী ‘হরিজন’ পত্রিকায় ব্রিটিশ সরকারকে ভারত ত্যাগ করে যাবার উপদেশ দিয়ে এক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। কিন্তু তদানীন্তন পরিস্থিতিতে গান্ধীজীর এই প্রস্তাব সম্বন্ধে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অনেকেই দ্বিধাগ্রস্থ হন। গান্ধীজী স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেন যে, যদি তাঁর এই প্রস্তাব কংগ্রেস গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক হয় তাহলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করবেন এবং স্বতভাবে এ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলবেন। তাঁর ভাষায় – “Out of the stands of India he would, create a movement which would be larger than the congress itself.” তাঁর এই অনমনীয় মনােভাবের ফলে ১৯৪২ খ্রীষ্টাব্দের ৮ই আগস্ট কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে ভারতছাড় প্রস্তাব গৃহীত হয়।
ভারত ছাড় প্রস্তাব গৃহীত হলে ৯ই আগস্ট ভােরে গান্ধীজী সহ সকল স্তরের কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হন। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানকে বে-আইনী ঘােষণা করা হয়। নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহাসিক ভারত ছাড়াে আন্দোলন শুরু হয়। গান্ধীজীর ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গো’ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবাসী নেতৃ-হীন অবস্থায় এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তােলে। দেশের সর্বত্র গণবিদ্রোহ দেখা দেয়। হরিজন পত্রিকায় গান্ধীজীর ঘােষণা ‘সারে হিন্দুস্থানমে জ্বালামুখী কুটেগী’ বর্ণে বর্ণে সত্য হল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .