পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে মিশনারীদের অবদান
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে খ্রিষ্টান মিশনারীরা এক অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে ভারতবাসীর কু-সংস্কার দূর করে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার করা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে ১৮৫৩ খ্রিঃ পর্যন্ত খ্রিষ্টান মিশনারীরা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারে বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেন।
উদ্যোগ
খ্রিষ্টিয় মিশনারীরা সরকারী প্রচেষ্টায় ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের জন্য অপেক্ষা করে নিজ চেষ্টায় ইংরেজী শিক্ষা বিস্তারের কাজে হাত দেন।
ব্যাপটিস্ট মিশনের উদ্যোগ
শ্রীরামপুরে ১৮০০ খ্রিঃ উইলিয়াম কেরি, মসােম্যান ও ওয়ার্ড নামে তিনজন খ্রিষ্টান মিশনারি শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ১২৬ টি বিদ্যালয় স্থাপন করে এবং সেখানে প্রায় দশ হাজার ছাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষালাভের সুযােগ পায়। ১৮১৮ খ্রিঃ এঁরা শ্রীরামপুরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
লণ্ডন মিশনারীর উদ্যোগ
লণ্ডন মিশনারী সােসাইটির রবার্ট মে চুঁচুড়ায় একটি ইংরেজী বিদ্যালয় গড়ে তােলেন। পরে তাঁর উদ্যোগে ৩৬টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
চার্চ মিশনারীর উদ্যোগ
চার্চ মিশনারী সােসাইটির উদ্যোগে কলকাতা ছাড়াও চুঁচুড়া, বর্ধমান, কালনা, বহরমপুর, মালদহ প্রভৃতি অঞ্চলে বহু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। দক্ষিণ ভারতেও এই সােসাইটির শাখা ছিল।
স্কটিশ মিশনারীর উদ্যোগ
বাংলায় স্কটিশ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা আলেকজাণ্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিঃ জেনারেল অ্যাসেম্বিজ ইন্সটিটিউশন’ নামে এক বিখ্যাত বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি কালক্রমে স্কটিশ চার্চ কলেজে পরিণত হয়। ডাফ বেশ কিছু ইংরেজী বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
অন্যান্য
১৮৩৫ খ্রিঃ জেসুইট মিশনারীরা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, লরেটো হাউস কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বিশপ মিডল্টন শিবপুরে প্রতিষ্ঠা করেন বিশপস্ কলেজ। মাদ্রাজ ও বােম্বাই নগরেও মাদ্রাজ খ্রিষ্টান কলেজ ও বােম্বাই উইলসন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
পরিশেষে বলা যায় খ্রিষ্টান মিশনারীদের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ফলে ভারতীয় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত জীবনে বিশেষ পরিবর্তন সাধিত হয়। তারা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে ভারতে পশ্চিমী ভাবধারা ও যুক্তিবাদী মনােভাব গঠনে সক্ষম হয়েছিল এবং ভারতীয় সমাজে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া সূচিত হয়েছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .