১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গী প্রাধান্য পেতে থাকে। সুভাষচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহেরুর মধ্যে এক বামপন্থী মতাদর্শের প্রতিফলন দেখা যায়। জওহরলাল বলেছিলেন The true civil ideal is the socialist ideal, the communist ideal’ ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে গান্ধিজী আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করলে কংগ্রেসের বামপন্থী কর্মী ও নেতারা হতাশ হন। তারা কংগ্রেসের মধ্যেই বামপন্থী গােষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হন। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৪ খ্রিঃ-র ২৩ শে অক্টোবর ১৫০ জন প্রতিনিধি বােম্বাই শহরে মিলিত হয়ে ‘অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস সােস্যালিস্ট পার্টি গঠন করে। দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সম্পূৰ্ণানন্দ, আর সম্পাদক হন জয় প্রকাশ নারায়ণ।
উদ্দেশ্য
এই দলের মূল উদ্দেশ্য ছিল-
ক) কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিকে সংহত করা।
খ) স্বাধীনতার জন্য জাতীয় সংগ্রামে যােগদান।
গ) জাতীয়তাবাদের পথেই সমাজতন্ত্রের উত্তরণ ঘটানাে।
ঘ) কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীকে একজোট করা ও অর্থনৈতিক দাবিগুলি পুরণের যথাসম্ভব চেষ্টা করা।
সাফল্য
এই দলের উল্লেখযােগ্য নেতারা ছিলেন জয়প্রকাশনারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, আচার্য নরেন্দ্র ভাবে প্রমুখ। ভারতীয় জাতীয় রাজনীতিতে এই দল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা গ্রহণ করে। এই দলের প্রভাবেই সুভাষচন্দ্র ত্রিপুরী কংগ্রেসেসভাপতি পদে নির্বাচিত হন। বিহার, কেরালা, যুক্তপ্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে এই দল সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। সমাজতন্ত্রীদের প্রভাবের ফলেই ১৯৩৭-র নির্বাচনে কংগ্রেস ব্যাপক সফলতা লাভ করে।
সীমাবদ্ধতা
মতাদর্শের দিক থেকে সমাজতন্ত্রী দল প্রথম থেকেই দুর্বল ছিল, বিপনচন্দ্রের মতে, সমাজতন্ত্রীরা মার্কসবাদী, কেবিয়ান ও গান্ধীবাদ এই তিন ধারায় বিভক্ত ছিল। নরহরি কবিরাজের মতে, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তাদের কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না। প্রত্যেক নেতাই নিজের মত করে সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা দিতেন। এর ফলে কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের মাঝামাঝি একটি তৃতীয় শক্তি হিসাবে সমাজতন্ত্রী দল কোনদিনই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .