চিরস্থায়ী বন্দোবস্তু কী
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে থেকে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশের শাসনকালে জমিদার শ্রেণির আজীবন স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার ও জমিদার শ্রেণির মধ্যে ভূমিরাজস্ব চুক্তি করা হয়। এই বন্দোবস্ত ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ নামে পরিচিত। এর শর্তগুলি ছিল নিম্নরূপ :
(১) জমিদার বার্ষিক নির্দিষ্ট খাজনা পরিশোধের শর্তে জমির চিরস্থায়ী স্বত্ব বংশানুক্রমিকভাবে লাভ করে।
(২) জমিদার প্রতি বছর শেষ দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে সরকারি রাজস্ব জমা দিতে বাধ্য থাকবে অন্যথায় জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
(৩) প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও রাজস্ব অপরিবর্তিত থাকবে এবং জমিদার তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।
(৪) আদায় করা খাজনার ১ ভাগ সরকার লাভ করবে এবং ১১ ভাগ জমিদার পাবে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের গুরুত্ব
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন ছিল কোম্পানির শাসনকালে প্রবর্তিত সংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। বাংলা-বিহার ও ওড়িশায় প্রবর্তিত এই ব্যবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এর ফলে এযাবৎ চলে-আসা জমির ওপর কৃষকের স্বত্ব বিনষ্ট হয়ে জমিদারের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে কৃষকশ্রেণি পুরোপুরিভাবে জমিদার শ্রেণির মুখাপেক্ষী হয়ে ওঠে। অপরদিকে সনাতন জমিদার শ্রেণি ধ্বংস হয়ে তার স্থলে নতুন অর্থপিপাসু ও অত্যাচারী জমিদাররূপে পত্তনিদার ও ইজারাদারদের আবির্ভাব ঘটে। এই নতুন শ্রেণি কৃষকস্বার্থ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল।
বাৎসরিক রাজস্ব স্থির হলেও সরকারের যে খুব লাভবান হয়েছিল তা কিন্তু বলা যায় না। তবে সরকারের ওপর মুখাপেক্ষী একটি জমিদার শ্রেণি গড়ে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি রচনায় সরকার সফল হয়, যদিও ক্রমবর্ধমান কৃষক অসন্তোষ পরবর্তী সময়ে একের পর এক ব্রিটিশবিরোধী কৃষক বিদ্রোহকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। যে কারণে ব্যাডেন পাওয়েল চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের গুরুত্বের মূল্যায়ন করে বলেছেন—“The Permanent Settlement disappointed many expectations and produced several results that were not anticipated.
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .