চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফল নিয়ে ঐতিহাসিক মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। মার্শম্যান, স্মিথ, রমেশচন্দ্র দত্ত প্রমুখ যেমন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রশংসা করেছেন তেমনি হোমাস্ এডওয়ার্ড, পাওয়েল প্রমুখ এর সমালোচনা করেছেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল
কোম্পানি ভারতীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ শুরু করলেও বাৎসরিক আয় নিশ্চিত করতে অসমর্থ হয়। ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর সমগ্র শাসনকাল জুড়ে নানা পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেও স্থায়ী আয় নির্ধারণে অসমর্থ হন। পরবর্তী সময়ে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গ্রহণ করে।
লর্ড কর্নওয়ালিশ রাজস্ব সম্পর্কে কোম্পানির অনিশ্চয়তার অবসান ঘটান। যে কারণে ঐতিহাসিক স্মিথ বলেছেন—“Lord Cornwallis introduced his permanent settle-ment and effected a revolution.”
প্রথমত
এই ব্যবস্থা চালু হলে সরকারের আয়ব্যয় সংক্রান্ত হিসেব বা বাজেট পাশ করার সুবিধা হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সরকারি মদতপুষ্ট জমিদার শ্রেণির আনুগত্য সরকার লাভ করে এবং ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থায়িত্ব লাভ করে। এদিক দিয়ে মূল্যায়ন করে মার্শম্যান বলেছে —“It was a bold, brave and wise measure.”
তৃতীয়ত
কৃষির উন্নতি ও সরকারের আয় বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত
ইংরেজ অনুগ্রহপ্রাপ্ত এক শ্রেণির দেশীয় গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। পি. রবার্টস তাই বলেছেন, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে এই দেশীয় অভিজাত শ্রেণির বিশেষ সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি ছিল আরও বেশি মারাত্মক।
প্রথমত
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদার শ্রেণি লাভবান হলেও কৃষকশ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বিতীয়ত
সিরাজুল ইসলাম দেখিয়েছেন যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে পুরাতন জমিদার শ্রেণির বিলোপ ঘটে। তাদের স্থলে বড়ো ব্যবসায়ী, জমিদারের অসৎ কর্মচারী ও শহরে বসবাসকারী ধনী অভিজাত শ্রেণি নতুন জমিদাররূপে আত্মপ্রকাশ করে। এই নতুন জমিদার শ্রেণি গ্রাম্যজীবন ও কৃষকদের স্বার্থ সম্পর্কে উদাসীন ছিল।
তৃতীয়ত
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পেলেও সরকারি আয় সে অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। ঐতিহাসিক হোমস্ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেছেন—“The permanent settlement was a sad blunder.”
চতুর্থত
নতুন জমিদার শ্রেণি শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় মধ্যস্বত্বভোগীরূপে ছোটো ছোটো জমিদারদের তারা নিযুক্ত করত। এইভাবে পত্তনি বা পাটনি ব্যবস্থার সূচনা হয়। ফলে কৃষকশ্রেণি অর্থনৈতিক শোষণে নিষ্পেষিত হতে থাকে।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি প্রকট হয়ে উঠলে ‘প্রজাস্বত্ব আইন’ প্রচলন করে কৃষক স্বার্থ অনেকখানি সংরক্ষিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব খারাপ হলেও, একটি স্থায়ী ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা প্রদানের ফলে রমেশচন্দ্র মুজমদার, রমেশচন্দ্র দত্ত প্রমুখ এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .