ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ
সূচনা
ভিয়েতনামের পূর্বনাম ইন্দোচিন। দীর্ঘদিন ধরে ভিয়েতনাম ফরাসি শাসনাধীনে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভিয়েতনাম আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লাভের আশায় ফ্রান্সকে সাহায্য করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে ফ্রান্স কঠোর নীতি অবলম্বন করলে ড. হো-চি-মিন- এর নেতৃত্বে সেখানে কমিউনিস্ট পার্টি বিদ্রোহ শুরু করে।
ভিয়েতনামে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হো-চি-মিন কমিউনিস্ট পার্টিকে সংগঠিত করেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তি বাহিনী টং-মিং-এর রাজধানী হ্যানয় দখল করে এবং সেখানে ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র ঘোষিত হয়।
ফ্রান্স বনাম ভিয়েতনাম যুদ্ধ
ফ্রান্স ভিয়েতনামের এই প্রজাতন্ত্রকে মেনে নেয়নি। তাই ফ্রান্স ভিয়েতনাম ছাড়ল না। ফলে ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠল। এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে আর্থিক সাহায্য করতে থাকে। শেষে ফ্রান্স একটা সমগ্র জাতির মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে পেরে উঠতে পারবে না দেখে সম্রাট বাওদাই-এর নেতৃত্বে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম পুতুল সরকার গঠন করে।
ফ্রান্সের পরাজয়
দীর্ঘ কয়েক বছর সশস্ত্র সংগ্রামের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনাম ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দিয়েন-বিয়েন-ফু আক্রমণ করে ও ফরাসি বাহিনী ভিয়েতনামের সুযোগ্য সেনাপতি গিরাপের কাছে সম্পূর্ণ পরাজিত হয়।
জেনিভা সম্মেলন
জেনিভার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভিয়েতনামকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়। উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম। উত্তর ভিয়েতনামে হো-চি-মিন-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমেরিকার মদতপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের সঙ্গে উত্তর ভিয়েতনামের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ ৩০ বছর, সংগ্রামের পর ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনাম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
উপসংহার
ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রাম বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামবাসীর মরণপণ সংগ্রাম যে-কোনো দেশের মুক্তিকামী জনগণের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। লক্ষ লক্ষ ভিয়েতনামবাসীর প্রাণের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীন ও মুক্ত ভিয়েতনাম তার ঐতিহ্যকেই তুলে ধরেছে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .