ঘূর্ণবাত বৃষ্টি
জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নিম্নচাপের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ওপরে উঠে শীতল হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবাত বৃষ্টি বলে। কোনো স্থানে প্রবল নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে চারদিক থেকে ছুটে আসা শুকনো, ঠাণ্ডা ও ভারী বাতাসের ওপর জলীয় বাষ্পপূর্ণ গরম বাতাস উঠে যাওয়ার জন্যই ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।
● কারণ
(১) প্রচণ্ড উষ্ণতার ফলে, কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে প্রবল নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে ঐ একই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে জলভাগের ওপর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ গরম বায়ু এবং স্থলভাগের ওপর থেকে ঠাণ্ডা ও শুকনো বায়ু ভূমির প্রায় সমান্তরাল ভাবে ছুটে আসে।
জলভাগের ওপর দিয়ে আসে বলে গরম বাতাসে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে এবং গরম বাতাস ঠান্ডা বাতাসের চেয়ে হাল্কা হওয়ায় তা ঠাণ্ডা বাতাসের ওপরে উঠতে বাধ্য হয়। ঠাণ্ডা বাতাস ওপরে উঠলে গরম বায়ুর জলীয়বাষ্প সহজেই ঠাণ্ডা হয়ে দ্রুত শিশিরাঙ্কে পৌঁছে যায় এবং মেঘের সৃষ্টি করে। আরও ঠাণ্ডায় ঐ মেঘ ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বৃষ্টিপাত প্রধানত ঘূর্ণবাতের প্রভাবে হয়, তাই এই বৃষ্টিপাতকে ঘূর্ণবাত বৃষ্টি বা সীমান্তবৃষ্টি বলে।
(২) ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্মমণ্ডলে প্রবল নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বাতাস ঐ নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে আসার সময় প্রবল বেগে ওপরে উঠে ওপরের শীতলবায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত বলে।
(৩) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ু পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু উষ্ণবায়ু হালকা বলে ধীরে ধীরে শীতল বায়ুর ওপর উঠে আসে এবং উষ্ণবায়ুর মধ্যস্থিত জলীয় বাষ্প শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূৰ্ণ বৃষ্টিপাত বলে।
উদাহরণ
(১) ভারতে কালবৈশাখী ঝড়ের ফলে যে বৃষ্টিপাত হয় তা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণ বৃষ্টিপাতের একটি উদাহরণ; (২) সাধারণত এই বৃষ্টি দীর্ঘ সময় ধরে ঝির ঝির করে পড়ে। দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে শরৎ ও হেমন্তকালে মাঝে মাঝে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .