মৌসুমি বায়ু
“মৌসিম” একটি আরবি শব্দ, এর অর্থ হল ঋতু। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যে বায়ুপ্রবাহ পরিবর্তিত হয় তাকে মৌসুমি বায়ু বলে। প্রকৃতপক্ষে সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ হল মৌসুমি বায়ু।
গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি
সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর মতো মৌসুমি বায়ু সৃষ্টির অন্যতম কারণ হল, বিভিন্ন ঋতুতে স্থলভাগ ও সমুদ্রের মধ্যে বায়ুচাপের পার্থক্য। গ্রীষ্মকালে সূর্য উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তির ওপর প্রায় লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশগুলোর স্থলভাগ জলভাগের থেকে বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে স্থলভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায়, দক্ষিণ দিকের সমুদ্র থেকে শীতল বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুকেই উত্তর গোলার্ধে “গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু” বলে।
গ্রীষ্মের মৌসুমী বায়ু সমুদ্রের উপর দিয়ে আসে বলে এতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। এজন্য যে সব দেশের ওপর দিয়ে এই বায়ু প্রবাহিত হয় সেইসব দেশে এই বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
গ্রীষ্মকালে সিন্ধু-গাঙ্গেয় ব্রষ্মপুত্র সমভূমি এবং মায়ানমার উত্তপ্ত হওয়ার ফলে এইসব স্থানে বায়ুর চাপ হ্রাস পায় এবং ভারত মহাসাগর থেকে নিরক্ষরেখার দিকে সারাবছর ধরে প্রবাহিত দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু এইসব স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে ফেরেল সূত্র অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর গতি পরিবর্তিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুতে পরিবর্তিত হয়, এই জন্য গ্রীষ্মের মৌসুমি বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুও বলা হয়।
আরব সাগর থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম ভারতে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশ, অসম ও মায়ানমারে বৃষ্টিপাত হয়। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ু চিন, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোচীন প্রভৃতি দেশে প্রবাহিত হয়। এইসব দেশে এই বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে একে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .