সাময়িক বায়ুপ্রবাহ
যে সমস্ত বায়ুপ্রবাহ বছরের বিশেষ সময়ে দেখা যায়, সেইসব বায়ুপ্রবাহকে সাময়িক বায়ুপ্রবাহ বলে। কোনও অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের ফলে সাময়িক বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। সমুদ্রবায়ু, স্থলবায়ু এবং মৌসুমি বায়ু স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের উদাহরণ।
বিভিন্ন রকমের সাময়িক বায়ুপ্রবাহ
■ [ক] সমুদ্রবায়ু
সমুদ্র, হ্রদ অথবা বিস্তৃত জলভাগ থেকে যে বায়ু সাধারণত দিনের বেলায় স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রবায়ু বলে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে দিনেরবেলায় স্থলভাগ জলভাগের তুলনায় বেশি গরম হয়ে পড়ে। গরম স্থলভাগের সংস্পর্শে এসে স্থলভাগ সংলগ্ন বায়ুও গরম এবং হালকা হয়ে ওপরে উঠে যেতে থাকে।
জলভাগ অপেক্ষাকৃত কম গরম হওয়ায় সেখানকার ঠাণ্ডা ও উচ্চ চাপের বায়ু তখন সাধারণত দিনের বেলায় প্রবাহিত হয়। বেলা স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। সমুদ্রবায়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বায়ুর বেগ বাড়তে থাকে এবং সন্ধ্যাবেলায় সব থেকে বেগে প্রবাহিত হয়ে থাকে। সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রোপকূল বা বিস্তৃত জলভাগের তীরবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন বা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু দেখা যায়।
■ [খ] স্থলবায়ু
যে বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্র, হ্রদ অথবা বিস্তৃত জলভাগের দিকে সাধারণত সন্ধ্যার পর প্রবাহিত হয়, তাকে স্থলবায়ু বলে। সন্ধ্যার পর স্থলভাগ তাপ বিকিরণ করে তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে, ফলে সেখানকার বায়ুও শীতল ও ভারী থাকে। কিন্তু উষ্ণসমূদ্র সারাদিনের তাপ সঞ্চয় করে সমুদ্রের জল তখনও গরম থাকে, ফলে সমুদ্রের ওপরের বায়ুতে নিম্নচাপ হয় এবং ঐ বাতাস হালকা হয়ে ওপরে উঠে যেতে থাকে। তখন স্থলভাগের ঠাণ্ডা ও উচ্চচাপের বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুপ্রবাহকে স্থলবায়ু বলে। স্থলবায়ু সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে প্রবাহিত হলেও মধ্য রাত্রি থেকে ভোর রাত্রির মধ্যে প্রবলভাবে প্রবাহিত হয়।
■ [গ] মৌসুমি বায়ু
সমুদ্রবায়ু এবং স্থলবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ হল মৌসুমি বায়ু। “মৌসিম” একটি আরবী শব্দ, এর অর্থ হল ঋতু; অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বায়ুপ্রবাহও পরিবর্তিত হয়। স্থলভাগ ও জলভাগের উত্তাপের পার্থক্যের ফলে সমুদ্রবায়ু এবং স্থলবায়ুর মত মৌসুমি বায়ুরও সৃষ্টি হয়।
• সংজ্ঞা
বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের ফলে, যে বায়ু বছরের কোনো নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট দিক থেকে প্রবাহিত হয় তাকে মৌসুমী বায়ু বলে।
→ উদাহরণ
প্রধানত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (ভারত, চিন, জাপান, বাংলাদেশ, উত্তর শ্রীলঙ্কা, কোরিয়া, ইন্দোচিন, থাইল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশে) মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেখা যায়। এছাড়া উত্তর আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা (মেক্সিকো), উত্তর অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি অঞ্চলেও মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেখা যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .