বায়ুর চাপের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। বায়ু চাপের পার্থক্যের জন্যই বায়ুপ্রবাহিত হয়। বায়ু সব সময় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, একেই বায়ুপ্রবাহ বলে। আবার বায়ু চাপের তারতম্যের ওপরই বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ভর করে। আমাদের এই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে কোথাও নিম্নচাপ, আবার কোথাও উচ্চচাপ দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ু চাপের পার্থক্যের কারণগুলো হল : (১) বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য, (২) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণের তারতম্য, (৩) ভূমির উচ্চতার তারতম্য এবং (৪) পৃথিবীর আবর্তন গতি।
বায়ু চাপের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীকে সাতটি নির্দিষ্ট বায়ুচাপ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। আবার পৃথিবীর আকৃতি প্রায় গোলাকার হওয়ার জন্য এক একটি বায়ুচাপ অঞ্চল পৃথিবীপৃষ্ঠকে এক একটি ‘রিং’বা ‘বলয়ের মত’ ঘিরে আছে, তাই এদের বায়ুচাপ বলয়ও বলে। পৃথিবীর ৭টি বায়ুচাপ বলয়ের মধ্যে ৪টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় [ যেমন : (১) সুমেরু উচ্চচাপ বলয়, (২) কুমেরু উচ্চচাপ বলয় রয়েছে, (৩) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং (৪) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়] এবং ৩টি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় রয়েছে [ যেমন : (১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, (২) সুমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় এবং (৩) কুমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয়]।
■ [১] নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
(ক) নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ৫°-১০° অক্ষাংশের মধ্যে সূর্য সারা বছর লম্বভাবে প্রখর কিরণ দেয়। সুতরাং এই অঞ্চলের বায়ু অন্যান্য অঞ্চল থেকে উষ্ণ ও লঘু হয়। (খ) অন্যদিক, এই অঞ্চলে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগ বেশি বলে, সূর্যের উত্তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে।
(গ) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য এই অঞ্চলের উচ্চস্তরের উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে পড়ে।
■ এই সব কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ, জলীয় বাষ্পপূর্ণ ও হালকা বায়ুর চাপ নিম্ন হয় এবং নিম্নচাপের বায়ু লঘু বলে সোজা উপরে উঠে যেতে থাকে। প্রধানত ঊর্ধ্বগামী বলে এই বায়ুর বিভিন্ন দিকে প্রবাহ নেই বললেই চলে, ফলে এখানে একটি শান্তভাব বিরাজ করে, তাই এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্তবলয়ও বলা হয়।
■ [২-৩] দুই মেরুর নিকটবর্তী স্থানের বা মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়
দুই মেরুর নিকটবর্তী অঞ্চলে অতিরিক্ত শৈত্যের জন্য বায়ু সর্বদাই শীতল ও ভারী হয়। উপরন্তু সূর্যকিরণের অভাবে বায়ুতে জলীয় বাষ্প কম থাকে। ফলে এখানে বায়ু চাপ সর্বদাই উচ্চ থাকে এবং উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।
■ [৪-৫] মেরুবৃত্ত অঞ্চলের দুটি নিম্নচাপ বলয়
পৃথিবীর আবর্তনের বেগ মেরু দ্বয়ের তুলনায় দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে (৬০°-৬৫° অক্ষাংশে) অনেক বেশি। এইজন্য এই দুই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ার ফলে, মেরুবৃত্ত প্রদেশে বায়ুর ঘাটতি পড়ে এবং বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ ও মেরু বায়ুপ্রবাহ যেখানে মিলিত হয়েছে সেখানে বায়ু প্রবাহহীন হওয়ায় এক শান্ত ভাব বিরাজ করে, একে তাই মেরুদেশীয় সীমান্ত বা শান্তবলয় বলে।
■ [৬-৭] কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ, আর্দ্র ও লঘু বায়ু ঊর্ধ্বাকাশে পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ঘুরে ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে (২৫°-৩৫° অক্ষাংশে) নেমে আসে। আবার, মেরুদ্বয় থেকে শীতল ও ভারী উচ্চচাপের বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তির নিকট এই দুই ভারী বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি করে। এই বায়ু প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী হওয়ায় এর কোনো পার্শ্ব প্রবাহ থাকে না, তাই কোনো বায়ুপ্রবাহ পরিলক্ষিত না হয়ে এক শান্তভাব বিরাজ করে, একে তাই কর্কটীয় ও মকরীয় শান্তবলয় বলে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .