সুনামি
বিশাল সামুদ্রিক জলোচ্ছাসকে জাপানি ভাষায় সুনামি বলে। সমুদ্রতলে ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রে জলস্ফীতি ঘটে উপকূলভাগে বন্যার তাণ্ডব বা সুনামি দেখা দিতে পারে। ভূত্বক কয়েকটি ‘গতিশীল প্লেট’ বা পাতের সমন্বয়ে গঠিত। এইসব গতিশীল পাতগুলোর মধ্যে যে কোন্ দুটি পাত যখন পরস্পরের কাছে সরে আসে তখন ঐ দুটি পাতের সংযোগ রেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্প হয়। সমুদ্রতলে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ঢেউ যতই উপকূলের দিকে এগোতে থাকে ততই এর উচ্চতা ও শক্তি বাড়তে থাকে।
অবশেষে বিশাল বিশাল প্রকাণ্ড উঁচু এই ঢেউ বিপুল শক্তিতে উপকূলভাগে আছড়ে পড়ে। এই জলোচ্ছ্বাসের ফলে উপকূল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি এবং হাজার-হাজার মানুষ ও পশু-পাখির জীবন হানি ঘটে।
উদাহরণ
২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর (রবিবার) তারিখে ইন্দোনেশিয়ার সব থেকে বড়ো দ্বীপ সুমাত্রার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীভূত হওয়া ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা নাগাদ প্রথম অনুভূত হয়, রিক্টার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৯। এর পর ধারাবাহিকভাবে ৬টি জোরালো থেকে মাঝারি ভূ-কম্পন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সমুদ্রতলের ৪০ কিমি গভীরে, যার দরুন প্রতিটি কম্পনের সঙ্গে ভারত মহাসাগরের উত্তর উপকুল জুড়ে প্রবল থেকে প্রবলতর সামুদ্রিক জলোচ্ছাস বা সুনামির সৃষ্টি হয়। সুমাত্রার নীচে অবস্থিত ভারতীয় পাতটি বিপজ্জনকভাবে বর্মা পাতের নীচে চাপা পড়ে যাওয়াই ছিল এই ভূমিকম্পের প্রধান কারণ।
সুমাত্রার কাছে রয়েছে ভারত মহাসাগরের একমাত্র গভীর সমুদ্রখাত সুন্দা (গভীরতা ৭,৩২০ মিটার)। এই খাতের নীচে ভূমিকম্প হওয়ায় সমুদ্রতলে ভূমিকম্পের পরেই ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার গতিতে সুনামির ঘূর্ণিস্রোত ছুটে যায়। গভীর সমুদ্রে এই সুনামির প্রবলতা না বোঝা গেলেও উপকূলভাগে জলোচ্ছাসের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩৩ মিটার (কমবেশি ১০০ ফুট) পর্যন্ত। এমনকি সমুদ্রে ভূমিকম্প হলেও উপকূলের নিকটবর্তী পুকুর, খাল বিলেও জলস্ফীতি দেখা দিতে পারে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .