দ্রাঘিমারেখা বা দেশান্তররেখা
মূলমধ্যরেখা থেকে ১° অন্তর অন্তর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দিকেই ১৮০° পর্যন্ত অসংখ্য রেখা কল্পনা করা হয়, যারা উত্তর মেরু থেকে আরম্ভ করে নিরক্ষরেখাকে সমকোণে ছেদ করার পর দক্ষিণ মেরুতে পরস্পর মিলিত হয়। এরা পৃথিবীর পরিধির অর্ধেকের সমান, অর্থাৎ এক-একটি অর্ধবৃত্ত। এদের দেশান্তর রেখা, মধ্যরেখা বা দ্রাঘিমারেখা বলে।
দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি
(১) পরিধি : দ্রাঘিমারেখাগুলোর পরিধি সর্বত্র সমান; (২) পারস্পরিক দূরত্ব : দ্রাঘিমাগুলো
প্রত্যেকটি এক-একটি অর্ধবৃত্ত, কিন্তু এরা পরস্পরের সমান্তরাল নয়। সুতরাং এদের
পরস্পরের দূরত্ব সমান নয়। মোটামুটিভাবে ১ ডিগ্রি অন্তর দুটি দ্রাঘিমারেখার রৈখিক
দূরত্ব নিরক্ষরেখার ওপর সর্বাধিক (১১১.১ কিলোমিটার); মকরক্রান্তি ও কর্কটক্রান্তিতে
(২৩° অক্ষাংশ) ১০২.৪ কিলোমিটার সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তে ৪৪.৮ কিলোমিটার, কিন্তু মেরুদ্বয়ে এরা পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়; (৩) সর্বাধিক মধ্যরেখা : সর্বাধিক মধ্যরেখার মান ১৮০°; (৪) দ্রাঘিমারেখাগুলো মূলমধ্যরেখার পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে বাড়ে; (৫) একই দ্রাঘিমারেখার ওপর অবস্থিত সব স্থানের দ্রাঘিমাও এক হয়; (৬) প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা প্রতিটি অক্ষরেখাকে লম্বভাবে ছেদ করে। এই ছেদবিন্দুর পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীর যে-কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়, (৭) সময়ের সঙ্গে দ্রাঘিমার সম্পর্ক : দ্রাঘিমারেখাগুলো উত্তর-দক্ষিণে পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে বলে একই দ্রাঘিমারেখার সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন এবং সূর্যাস্ত হয়, অর্থাৎ একই দ্রাঘিমাতে অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের সময় একই রকমের হয়, (৮) জলবায়ুর সঙ্গে দ্রাঘিমারেখার সম্পর্ক : অক্ষাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একই দ্রাঘিমারেখার বিভিন্ন স্থানের জলবায়ুর মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .