পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল
বার্ষিক গতির অন্যতম ফলাফল হল : (ক) দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ও (খ) ঋতু পরিবর্তন।
[ক] দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি
সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখাকে কক্ষপথের সঙ্গে ৬৬° কোণে হেলিয়ে রাখে বলে। বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের উপর ৬৬ ১০ কৌণিকভাবে অবস্থান করে বলে ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখা ছাড়া অন্যান্য সমাক্ষরেখাগুলিকে অসমানভাবে বিভক্ত করে, এর ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠে দিন-রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।
২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী আপন কক্ষপথে এমনভাবে অবস্থান করে যে, সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে পড়ে। ফলে এই সময় পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিনরাত্রি সমান হয়। নিরক্ষরেখায় সারা বছরই দিনরাত্রি সমান।
২২শে মার্চ থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে উত্তর গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন এর বিপরীত অবস্থান দেখা যায় বলে সেখানে দিন ছোটো ও রাত্রি বড়ো হয়।
২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড়ো এবং রাত্রি ছোটো হয়। উত্তর গোলার্ধে বিপরীত অবস্থার জন্য দিন ছোটো ও রাত্রি বড়ো হয়।
[খ] ঋতু পরিবর্তন
বার্ষিক গতির ফলে (১) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাসবৃদ্ধি এবং (২) পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার ৬৬° কৌণিক অবস্থানের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে লম্ব ও তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মির জন্য উত্তাপের পরিবর্তন—
প্রধানত এই দুই কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়। সূর্য যখন পৃথিবীর যে গোলার্ধে অবস্থান করে তখন সেই গোলার্ধে দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয় এবং সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ে। বিপরীত গোলার্ধে তখন রাত্রি বড়ো ও দিন ছোটো হয় এবং সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। দিন যদি বড়ো হয় এবং সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে তাহলে পৃথিবী দিনের বেলায় যে তাপ গ্রহণ করে, ছোটো রাতে সেই তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না। ফলে ঐ স্থানে তাপ সঞ্জিত হয়ে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। স্বভাবতই যখন যে গোলার্ধে দিন বড়ো হয় তখন সেই গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল পরিলক্ষিত হয়। বিপরীত গোলার্ধে তখন শীতকাল শুরু হয়। এইভাবে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .