ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের মূলভিত্তি
বিগত বিভিন্ন সময়ে ভারতের নানান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর পুনর্গঠনের সময় প্রধানত ভাষা, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দক্ষতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সাদৃশ্য—এই ৫টি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেমন :
[১] ভাষা
বহু ভাষাভাষী মানুষের দেশ ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের স্বার্থ রক্ষার কথা ভেবে, ১৯৫৬ সালে মূলত ভাষার ভিত্তিতে ভারতের রাজ্যগুলোর পুনর্গঠন করা হয়। ভারতের কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ যে যে ভাষায় কথা বলেন, সেই সেই অঞ্চলগুলোকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়, যেমন : ওড়িয়া ভাষা-প্রধান অঞ্চলকে ওড়িশা, বাংলা ভাষাপ্রধান অঞ্চলকে পশ্চিমবঙ্গ কিংবা অসমীয়া ভাষাপ্রধান অঞ্চলকে অসম রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। এই হিসেবে তেলেগু, পাঞ্জাবি, তামিল, কাশ্মীরী ভাষাপ্রধান অঞ্চলগুলো হল যথাক্রমে অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, জম্মু-কাশ্মীর প্রভৃতি।
[২] প্রশাসনিক সুবিধা ও দক্ষতা
১৯৫৬ সালে মূলত ভাষার ভিত্তিতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলোর পুনর্গঠন করা হলেও পরবর্তীকালে সব সময় এই নীতি অনুসরণ করা যায়নি, যেমন :
(ক) প্রধান ভাষা হিন্দি হলেও উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়কে পাঁচটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে, কারণ : একটি রাজ্যের মর্যাদা পেলে হিন্দিভাষী ঐ বিশাল রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করতে বিভিন্ন ব্যাপারেই অনেক প্রশাসনিক অসুবিধা এবং জটিলতার সৃষ্টি হত। এই জন্যই ঐ হিন্দিভাষী বিশাল অঞ্চলকে পাঁচটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করা হয়;
(খ) পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের অধিবাসীদের প্রধান ভাষা বাংলা এবং এদের মিলিত আয়তন ভারতের অনেক একক রাজ্যের তুলনায় কম হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের অবস্থান সম্পূর্ণ আলাদা ভৌগোলিক অঞ্চলে এবং এদের মাঝে রয়েছে অন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। কাজেই ভাষা এক হলেও প্রধানত ভৌগোলিক বাধার জন্য একটি রাজ্য হিসেবে প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানো অসম্ভব হত, তাই পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা দুটি পৃথক রাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে।
[৩] আঞ্চলিক সংস্কৃতি
এক একটি বিশাল অঞ্চলের অধিবাসীদের ভাষা এক হলেও তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান, চিন্তা-ভাবনা, অনুশাসন, সংস্কার এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতির পার্থক্য থাকায় প্রশাসনিক সুবিধার জন্য কোনো কোনো সময় বড়ো রাজ্য ভেঙে ছোটো রাজ্য করার প্রয়োজন অনুভূত হয়। ভাষা এক (হিন্দি) হলেও, যেমন:
(১) ঝাড়খণ্ড অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে উত্তর বিহারের অধিবাসীদের চিন্তাভাবনা এক না হওয়ায় বিহার রাজ্যকে ভেঙে ২টি পৃথক রাজ্যে (যেমন : বিহার ও ঝাড়খণ্ড) পরিণত করা হয়েছে;
(২) উত্তর প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চল উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে এই রাজ্যের সমভূমিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের চিন্তা-ভাবনা, সংস্কার ও অনুশাসনের পার্থক্য থাকায় বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যকে ভেঙে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাঞ্চল, এই দুটি পৃথক রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে।
[৪] প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সাদৃশ্য
কোনো অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সাদৃশ্যের বিভিন্নতা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে তা আঞ্চলিক সংস্কৃতির পার্থক্যের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে এবং প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। এই জন্য ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের সময় প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সাদৃশ্যের উপরও লক্ষ রাখা হয়েছে।
কোন্ বছর ভারত সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়?
১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি।
কোন্ বছর ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন পরিষদের সুপারিশ রূপায়িত হয়?
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত রাজ্য পুনর্গঠন পরিষদের সুপারিশ রূপায়িত হয়।
রাজ্যগুলির পুনর্গঠনকালে কোন্ কোন্ বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল?
ভারতের রাজ্যগুলির পুনর্গঠনকালে প্রধানত : (১) ভাষা, (২) সংস্কৃতি, (৩) প্রশাসনিক দক্ষতা, (৪) অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং (৫) প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সাদৃশ্য। —এই ৫টি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .