Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর পরিবেশের প্রভাব আলোচনা করো।

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনযাপন প্রণালী গড়ে উঠেছে পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। মানুষ তার পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বা খাপ খাইয়ে জীবনযাপন করে। পরিবেশের সঙ্গে মানুষের এভাবে মানিয়ে নেওয়া বা খাপ খাওয়ানোকে অভিযোজন (Adaptation) বলা হয়। এই অভিযোজন মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নতিকেই নির্দেশ করে। মানুষ বর্তমানে তার শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি ঘটিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতিকূলতাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষ তার নির্ভরশীলতা ক্রমশ কাটিয়ে জীবনযাত্রার উপযোগী এক নিজস্ব পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর পরিবেশের প্রভাব

মানুষ তার জীবিকা নির্বাহের জন্য নানারকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। অতীতে জীবিকা সংস্থানের জন্য মানুষের উপায়গুলি ছিল মাছ ও পশু শিকার। পরবর্তী সময়ে এর সাথে যোগ হয়েছে পশুপালন, কাঠ সংগ্রহ, কৃষিকাজ প্রভৃতি কাজ। বর্তমানে এসবের সঙ্গে জীবিকা হিসাবে প্রাধান্য লাভ করেছে খনিজ দ্রব্য উত্তোলন, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি বৃত্তিগুলি। মানুষ পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার জীবিকার সংস্থান করে।

উদাহরণস্বরূপ অত্যধিক তুষারপাতের জন্য মেরু অঞ্চলে কৃষিকাজ, পশুপালন বা অন্য কোনো জীবিকার সংস্থান সম্ভব নয় বলেই, সেখানকার অধিবাসী এস্কিমোরা মাছ ও পশু শিকার করে জীবিকার সংস্থান করে। আবার কানাডার উত্তরাংশ কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হলেও, অরণ্য সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ। তাই সেখানকার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা কাঠ সংগ্রহ। অন্যদিকে নদী উপত্যকার সমভূমি, উর্বর মাটি ও জলসেচের সুবিধা কৃষিকাজের বিশেষ সহায়ক হওয়ায়, ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকা, চিনের হোয়াংহো উপত্যকা এবং মিশরের নীলনদ উপত্যকা অঞ্চলের অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা হয়েছে কৃষিকাজ ।

অর্থনৈতিক জীবনের মতো মানুষের সামাজিক জীবনও পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মানুষের সামাজিক জীবনের অঙ্গ হল তার খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থান, পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতি। সাধারণত পৃথিবীর উত্তমণ্ডলের অন্তর্গত দেশগুলিতে ধান এবং নাতিশীতোয় মণ্ডলের দেশগুলিতে গম চাষের প্রাধান্য দেখা যায়। সে কারণেই ভারত, চিন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যশস্য হয়েছে ধান, গম নয়।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যশস্য গম, —ধান নয়। একইভাবে তুদ্রাগুলে কোনোরকম খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব নয় বলে, সেখানকার অধিবাসীরা মাছ ও প্রাণী শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদেও যে বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়, তার মূলেও আছে পরিবেশের অবদান।

মানুষের বাসস্থান তৈরিতেও রয়েছে পরিবেশের সুস্পষ্ট প্রভাব। মেরু অঞ্চলের অধিবাসী এস্কিমোরা শীতকালে বাস করে ইগলু’ নামে একরকম বরফের তৈরি গম্বুজাকৃতি ঘরে। আবার, মরু অঞ্চলের অধিবাসীরা বালির ঝড় থেকে রক্ষা পেতে ‘ঝোন পা’ নামে নীচু দেওয়ালযুক্ত ঢালু চালাবিশিষ্ট ঘরে বাস করে। একইভাবে বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ঘরের চালা ঢালু হয়ে থাকে। আরামদায়ক হয় বলে শীতপ্রধান দেশে কাঠের তৈরি বাড়ি যেমন বেশি দেখা যায়, তেমনই ভূমিকম্প প্রধান অঞ্চলে কাঠ ও বাঁশের তৈরি বাড়ি বেশি দেখা যায়।

খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থানের মতো মানুষের পরিবহন ব্যবস্থাতেও রয়েছে পরিবেশের প্রভাব। যেমন, মরু অঞ্চলে, বালির ওপর দিয়ে সড়ক বা রেলপথ গড়ে তোলা অসুবিধাজনক হওয়ায়, উটই সেখানকার পরিবহনের একমাত্র উপায়। আবার, মেরু অঞ্চলের ভূমি বরফাবৃত থাকে বলে, সেখানে ব্যবহার করা হয় বল্গা হরিণ ও কুকুরে টানা ‘স্লেজ গাড়ি। দেশের অভ্যন্তরে বড় বড় হ্রদ থাকায়, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহনের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে। একই ভাবে ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমিতে উন্নতি লাভ করেছে রেলপথ ও সড়কপথ পরিবহন ব্যবস্থা।

উপসংহার

সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রা প্রণালী গড়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ অনুসারেই। মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে রয়েছে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক,—দুরকম পরিবেশেরই সম্মিলিত প্রভাব বা মানব জীবনে পরিবেশের প্রভাব ।

Leave a reply