পৌর বর্জ্য জল
পৌরসভার অন্তর্গত গৃহস্থালি এবং কলকারখানা থেকে নির্গত যে জলে ভাসমান সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কণা, কলয়ডীয় পদার্থ ও প্যাথোজেনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় তাকে পৌর বর্জ্য জল বলা হয়।
পৌর বর্জ্য জল শোধনের প্রক্রিয়াসমূহ
পৌর অঞ্চলের বর্জ্য জলকে প্রধানত নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি দ্বারা শোধন করা হয়।
A. প্রাথমিক শোধন প্রক্রিয়া
পৌর বর্জ্য জল শোধনের প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ :
তঞ্চন (Coagulation)
এই পদ্ধতিতে জলে ভাসমান সূক্ষ্মকণা, জৈবদূষক ও জীবাণু নষ্ট করা হয়। প্রথম পর্যায়ে কিছু তত্ত্বক পদার্থ যেমন অ্যালুমিনিয়াম বা আয়রনের লবণ যুক্ত করা হয়। ফলে ভাসমান সূক্ষ্ম কণাগুলি জমাট বেঁধে যায়। এরপর সক্রিয় কার্বন গুঁড়ো, ক্লোরিন, ওজোন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো হয়। এতে প্রাথমিকভাবে জলের জীবাণুনাশ হয় ও জৈব দূষকগুলির জারণ ঘটে। সবশেষে প্রয়োজন মতো p” মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাসিড বা ক্ষার মেশানো হয়।
ফক্কুলেশন (Flocculation)
এই পর্যায়ে জলকে টারবাইনের সাহায্যে ধীরে ধীরে নাড়ালে জমাট বাঁধা সূক্ষ্মকণাগুলি ভারী অধঃক্ষেপে পরিণত হয়, যেগুলিকে ফ্লক্ (Floc) বলে।
অধঃক্ষেপন (Sedimentation)
প্রায় 20 থেকে 30 মিনিট পর জলকে অধঃক্ষেপন পাত্রে (Sedimentation Basin) ঢালা হয়। ঐ পাত্রে ফ্লকগুলি থেতাতে 2 থেকে 5 ঘণ্টা সময় নেয়। খুব সূক্ষ্ম ফ্রগুলি এখানে অধঃক্ষিপ্ত হয় না।
পরিস্রাবণ (Filtration)
অধঃক্ষেপণ প্রক্রিয়ার শেষে জলকে বালি বা অ্যানথ্রাসাইটের স্তরের ভিতর দিয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ফ্লকগুলি পৃথক হয়ে পড়ে। পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে উৎপন্ন জলকে পরিষত বলা হয়।
জীবাণুমুক্ত করণ (Disinfection)
পরিশ্রুত জলকে শেষ পর্যায়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। জীবাণুনাশক হিসাবে ক্লোরিনের ব্যবহার সর্বাধিক প্রচলিত। ক্লোরিন ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ওজোন, UV-রশ্মি, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি জলের প্রকৃতির ওপর অনেকাংশেনির্ভরশীল হয়ে থাকে।
B. গৌণ শোধন প্রক্রিয়া (Secondary treatment)
পৌর বর্জ্যজলের গৌণ শোধন প্রক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ
মৃদুকরণ (Softening)
এই প্রক্রিয়ায় খরজল (hard water) থেকে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনের ক্যাটায়নগুলিকে পৃথক করা হয়ে থাকে। মৃদুকরণ প্রক্রিয়াটি দুভাবে সম্পন্ন করা হয়। যথা—
- জলের সঙ্গে চুন ও সোডা মেশালে Ca++ ও Mg++ আয়ন অধঃক্ষিপ্ত হয় এবং পরিস্রাবনের দ্বারা এদের পৃথক করা হয়।
- এরপর আয়ন এক্সচেঞ্জারের মধ্য দিয়ে ক্যাটায়ন এবং অ্যানায়নগুলিকে পাঠানো হয়।
কার্বন শোষণ (Carbon absorption)
জলে উপস্থিত অবাঞ্ছিত স্বাদ ও দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক বা জৈব দূষক দূর করতে কার্বন শোষণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়।
বাতান্বয়ন (Aeration)
পানীয় জলে অল্প পরিমাণে অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকা বাঞ্ছনীয়। সেজন্য শেষপর্যায়ে জলের মধ্যে বুদবুদের আকারে বায়ু চালনা করা হয়। ফলে একদিকে যেমন অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তেমনি অপরদিকে জলে দ্রবীভূত CO2 ও HS গ্যাস কিছুটা মুক্ত হয়। উপরোক্ত পদ্ধতিতে শোধন করা জল জলাধার থেকে পৌর অঞ্চলের পাইপের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .