মৃত্তিকা ক্ষয়
বৃষ্টিপাত, জলস্রোত, নদীপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে এবং কৃষিকাজ, পশুপালন, বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদি মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে মৃত্তিকার উপরিভাগের উর্বর পদার্থের অপসারণ হলে, তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। বর্তমানে ভারতের একটি প্রধান সমস্যা হল মৃত্তিকা ক্ষয়। ভারতের মোট ভৌগোলিক আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশ স্থান মৃত্তিকা ক্ষয় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ
বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকার ক্ষয় হতে পারে। প্রধানত দুটি কারণে ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ে যায়-
(ক) মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণ
১। বৃষ্টিপাত
বড়ো বড়ো ফোঁটার বৃষ্টি হলে মৃত্তিকার উপরিভাগের স্তর অল্প অল্প করে ধুয়ে গিয়ে মৃত্তিকার বহিরাবরণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
২। বায়ুপ্রবাহ
প্রবল বেগে বায়ুপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকার সূক্ষ্ম কণাগুলি সহ এই অন্যত্র অপসারিত হয়। এইভাবে উত্তর পশ্চিম ভারতের শুষ্ক অঞ্চলে বা মরুভূমিতে বিপুল পরিমাণে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।
৩। জলপ্রবাহ
পর্বত ও পাহাড়ের ঢাল অনুসরণ করে বৃষ্টির জল নিজের দিকে নেমে আসার সময় মৃত্তিকার উপরের স্তরটিকে সম্পূর্ণভাবে অপসারিতকরে। এছাড়া নদীর জলস্রোত তীরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্তিকার ক্ষয়সাধন করে।
(খ) মৃত্তিকা ক্ষয়ের অপ্রাকৃতিক বা মনুষ্য-সৃষ্ট কারণ
১। নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন
গাছপালার শিকড় মৃত্তিকার কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখে। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির সময় গাছের পাতা মৃত্তিকাকে বৃষ্টির জলের আঘাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু যথেচ্ছভাবে গাছ কাটা হলে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্তিকা আলগা হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
২। জুম চাষ
উত্তর-পূর্ব ভারতের আদিম জনগোষ্ঠীর লোকেরা বনভূমির কিছু অংশ পরিষ্কার করে ওই গাঝপালা পুড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন প্রকার ফসরের চাষ করে। একে জুম চাষ বলে। জুম প্রথায় চাষ করলে মৃত্তিকার উপরের স্তরটি বৃষ্টির জলে ধুয়ে মৃত্তিকার ক্ষয় তরান্বিত করে।
৩। অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ
অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে তৃণভূমি ধ্বংস হয় এবং মৃত্তিকার কণাগুলি আলগা হয়ে যায়। ফলে পরবর্তীকালে বৃষ্টি ও বায়ুপ্রবাহের ফলে ওই আলগা মৃত্তিকা ধুয়ে যায়।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .