Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

প্রশাসক হিসেবে নেপোলিয়নের কৃতিত্ব আলোচনা কর। এগুলি বিপ্লবী আদর্শের সাথে কতখানি সংগতিপূর্ণ ছিল।

প্রশাসক হিসেবে নেপোলিয়নের কৃতিত্ব

১৮০০ থেকে ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। প্রথম কন্সাল হিসেবে তাঁর প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল ফ্রান্সে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং নিরাপত্তা বিধান করা। তাই প্রথমেই তিনি দেশে অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রবর্তনে উদোগী হন। তাঁর সামগ্রিক লক্ষ্য ছিল ফ্রান্সের সাংগঠনিক ও আর্থিক ব্যবস্থার পুনর্গঠন। একাজে তিনি একজন একান্ত অনুগত ও অনুপ্রাণিত প্রশাসকের সহায়তা পেয়েছিলেন। তিনি একাধিক সফল সংস্কার কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে, দেশবাসী তাঁর উপর আস্থা রেখে ভুল করেনি।

জনতার সার্বভৌমত্ব বা যৌথ ইচ্ছার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল না। কিন্তু জনগনের শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিধান করা যে প্রশাসকের প্রধান কর্তব্য,—এ সত্য তিনি ভুলে যাননি। তিনি বলতেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অদম্য ইচ্ছাশক্তি যদি বেয়নেটের দ্বারা সমর্থিত হয়, তবে কোন কাজই অসম্ভব হয়ে থাকে না।’ বাস্তবে তিনি এই দুটি শক্তির অধিকারী হয়েছিলেন এবং তাকে সাংগঠনিক কাজে নিয়োজিত করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন।

(১) প্রশাসনিক সংস্কার

প্রথমেই নেপোলিয়ন অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক পুনর্গঠনের দিকে নজর দেন। ইতিপূর্বে সমগ্র দেশকে ৮৩টি ডিপার্টমেন্টে ভাগ করা হয়েছিল। অধিকাংশ কর্মচারী আসতেন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এর ফলে দ্বিবিধ ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। অতি-বিকেন্দ্রীকরণের ফলে প্রশাসন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল এবং নির্বাচনের দ্বারা কর্মনিয়োগের ফলে যোগ্যতা বা দক্ষতার প্রকৃত মূল্য ছিল না। নেপোলিয়ন ডিপার্টমেন্টগুলি বহাল রাখেন, তবে স্থানীয় কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মনোনয়নের রীতি চালু করেন। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের ভার দেওয়া হয় একজন ‘প্রিফেক্ট’কে। প্রিফেক্টরা প্রথম কন্সাল কর্তৃক মনোনীত হতেন। অ্যারডাইস্‌মোট (জেলা) এবং কমিউনগুলির প্রধান হিসেবে যথাক্রমে সাব-প্রিফেক্ট ও মেয়ররাও কেন্দ্র কর্তৃক মনোনীত হতেন। স্থানীয় নির্বাচিত পরিষদগুলি কেবল পরামর্শদাতা সংস্থায় পরিণত হয়। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্র ছিল প্রথম কন্‌সাল। বলা বাহুল্য, এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন স্বয়ং নেপোলিয়ন। এইসব সংস্কারের ফলে প্রাচীন আমলের কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছিল। প্রদেশে প্রিফেক্টগণ ছিলেন সমস্ত ক্ষমতার অধীশ্বর। অনেকের মতে, প্রিফেক্টগণ পুরানো ব্যবস্থার ইন্‌টেন্‌ডেন্টদের মতই একক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল।

(২) সামঞ্জস্যবিধান-নীতি

ফ্রান্সের পুরানোপন্থীদের সঙ্গে বিপ্লবীদের যে মানসিক সংঘাত শুরু হয়েছিল, তার ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। এই পরিস্থিতির সমাধানকল্পে নেপোলিয়ন সামঞ্জস্যবিধান-নীতি গ্রহণ করেন। ক্ষমাপ্রদর্শন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সাহায্য এবং পুনর্বাসনের নির্দেশ দান করে নেপোলিয়ন দেশত্যাগী ও বিপ্লব-বিরোধীদের নতুন সরকারের প্রতি আস্থাশীল করে তোলেন।

(৩) আর্থিক সংস্কার

নেপোলিয়ন যখন প্রথম কন্‌সাল নিযুক্ত হন, সে সময় ফ্রান্সে যেসব সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করেছিল, তার মধ্যে প্রধান ছিল আর্থিক সমস্যা। ষোড়শ লুই-এর আমল থেকেই ফ্রান্সের অর্থব্যবস্থার ভাঙন শুরু হয়। গণনিরাপত্তা কমিটি সাময়িকভাবে অর্থব্যবস্থাকে চাঙ্গা করে তোলে। কিন্তু ডিরেক্টরীর আমলে মুদ্রাস্ফীতি আবার বল্গাহীন হয়ে দাঁড়ায়। নেপোলিয়ন জানতেন যে, দৃঢ় অর্থব্যবস্থা যে-কোন প্রশাসনের হূৎপিণ্ডস্বরূপ। তাই তিনি ক্ষমতায় এসে আর্থিক ব্যবস্থাকে একেবারে ঢেলে সাজান।

(ক) তিনি সরকারী দপ্তরগুলিকে ব্যয়সংকোচের নির্দেশ দেন। তিনি স্বয়ং সরকারী বাজেট পরীক্ষা করে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের হার নির্দিষ্ট করে দেন।

(খ) তিনি বিভিন্ন প্রকার বাড়তি কর রহিত করে কয়েকটি নির্দিষ্ট করের উপর জোর দেন। কর প্রদান করা নাগরিক কর্তব্য, — এই শিক্ষা প্রচারের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেন।

(গ) প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ প্রতি নেপোলিয়ন বেশী আগ্রহ দেখান। লবণ ও সুরার উপর পরোক্ষ কর আরোপ করা হয়।

(ঘ) কর আদায়ের ব্যাপারে প্রাদেশিক সভাগুলির কর্তৃত্ব বিলোফ করা হয়। কর আদায়ের জন্য প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে একজন করে ‘রিসিভার্স জেনোরেল’ নামক সরকারী কর্মী নিযুক্ত করা হয়। এদের অধীনে থাকত কিছুসংখ্যক নিম্নপদস্থ কর্মচারী।

(ঙ) নেপোলিয়ন ইংল্যাণ্ডের অনুকরণে ‘ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্স’ প্রতিষ্ঠা করেন (১৮০০ খ্রীঃ)। এই ব্যাঙ্ক থেকে শতকরা ৬ ফ্রাঁ সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৮০৩ খ্রীষ্টাব্দে ব্যাঙ্ক-নোট প্রচলনের দায়িত্বও এই ব্যাঙ্কের উপর অর্পিত হয়।

(চ) কাগজী মুদ্রার উপর তাঁর আস্থা ছিল না। তাই তিনি পুনরায় ধাতবমুদ্রা চালু করেন। ১৭৯৯-১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ৭৫ মিলিয়ন ফ্রাঁ সোনা ও রূপোর মুদ্রা বাজারে চালু হয়। তিনি নিজনামে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন। স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে ফাটকা-অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনাও নেপোলিয়নের অনন্য কৃতিত্ব। এইসব সংস্কারের ফলে ফ্রান্সে আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।

(৪) আইনবিধির সংস্কার

নেপোলিয়নের সংস্কারগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল আইনবিধির প্রবর্তন। ফরাসী আইন বিধিবদ্ধ করার দুরূহ ও জটিল কাজ নেপোলিয়ন সম্পূর্ণ করেন। বিপ্লবের পর ফ্রান্সে বহু নতুন আইন চালু হয়। আবার বুরবো আমলের বহু আইনও প্রচলিত ছিল। সেই সঙ্গে বহু স্থানীয় আইন ও যাজকীয় আইনও বহাল ছিল। এই জটপাকানো আইনব্যবস্থাকে সুসংহত, সুবিন্যস্ত, সামঞ্জস্যপূর্ণ ও জটিলতামুক্ত করার জন্য নেপোলিয়ন রাষ্ট্রীয় পরিষদকে নির্দেশ দেন। আইন-সংহিতা প্রণয়নের জন্য ই পরিষদের ৮৫টি অধিবেশন হয়। অবশেষে ২২৮৭টি ধারাসমন্বিত ‘আইন-সংহিতা’ রচিত হয়। নেপোলিয়নের নামানুসারে এর নাম হল “কোড নেপোলিয়ন” বা নেপোলিয়নের আইনবিধি।

এই আইন-সংহিতার তিনটি অংশ ছিল; যথা—দেওয়ানী, ফৌজদারী ও বাণিজ্যিক আইনবিধি। নতুন ফরাসী সমাজের বাইবেল হিসেবে গণ্য এই আইন-সংহিতায় ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বিবেকের স্বাধীনতা ও জীবিকার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। রেজিষ্ট্রী বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ বৈধ বলে ঘোষিত হয়। অবশ্য এর কয়েকটি সহজাত ত্রুটিও ছিল। যেমন, মুক্ত অর্থনীতির স্বার্থে শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। পুরুষের তুলনায় নারীর অধিকার অনেকটা সংকুচিত করা হয় ইত্যাদি। তবুও বলা যায়, এই আইনবিধির কোন জুড়ি ছিল না। প্রাকৃতিক আইন ও রোমান আইনের সমন্বয়ে গঠিত এই আইনবিধি ফ্রান্স থেকে সামন্ততন্ত্রের শেষ তলানিটুকুও মুছে দিয়েছিল। এই আইনবিধি ফ্রান্সের সীমানা অতিক্রম করে ইউরোপের বহু দেশে স্বীকৃতি লাভ করে।

(৫) ধর্মীয় সংস্কার

নেপোলিয়ন মনে করতেন, ‘জনসাধারণের ধর্মের প্রয়োজন আছে।’ তাই বিপ্লব পরবর্তীকালে চার্চের সাথে রাষ্ট্রের যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা প্রশমিত করতে নেপোলিয়ন উদ্যোগী হন। ধর্মবিষয়ক মীমাংসাকে তিনি রাজনৈতিক অবসান ঘটাতে পারলে অভ্যন্তরীণ সংহতি সুদৃঢ় হবে। সেই সঙ্গে পোপ ও চার্চ রাজতন্ত্রের দিক থেকে সরে আসবেন। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের নতুন পোপ ও চার্চ রাজতন্ত্রের দিক থেকে সরে আসবেন। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের নতুন পোপ হন নবম পীয়ুস। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন, বিজ্ঞ ও অমায়িক। এই সুযোগে নেপোলিয়ন পোপের সাথে একটি চুক্তির জন্য আলোচনা শুরু করেন। ১৮০১ খ্রীষ্টাব্দে পোপ ও নেপোলিয়নের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ‘ধর্মমীমাংসা’ বা concordat ১৮০১ নামে খ্যাত। এতে স্থির হল, সিভিল কন্‌স্টিটিউশন বাতিল করা হবে। সমস্ত যাজক পদত্যাগ করবেন। ভবিষ্যতে বিশপরা সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন এবং পোপ তাদের নিযোগ অনুমোদন করবেন। যাজকরা সরকারের কাছে আনুগত্যের শপথ নেবেন। সরকার বিশপ এবং যাজকদের বৃত্তি দান করবে। রোমান ক্যাথলিক ধর্ণ ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ ফরাসীর ধর্ম’ বলে স্বীকৃত হল। এইভাবে নেপোলিয়ন একটি বিরাট সমস্যার সমাধান করেন।

(৬) শিক্ষা-সংস্কার

নেপোলিয়ন শিক্ষাব্যবস্থারও ব্যাপক সংস্কার করেন। জাতির মধ্যে শিক্ষাবিস্তার রাষ্ট্রের কর্তব্য বলে গৃহীত হয়। তবে প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারে নেপোলিয়ন বেশী আগ্রহী ছিলেন না। মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নতি ও প্রসার ছিল তাঁর লক্ষ্য। আধা-সামরিক ভিত্তিতে তিনি ২৯টি লাইসী বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। কারিগরিবিদ্যা শিক্ষার জন্য পলিটেক্‌নিক ও শিক্ষক-শিক্ষণ বা আইন-বিদ্যালয়ও স্থাপিত হয়। ইউনিভার্সিটি অব্ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করে (১৮৯৮ খ্রীঃ) তার উপর শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণভার দেওয়া হয়। এই শিক্ষা-সংস্কারের প্রধান ত্রুটি ছিল এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলিত হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ শিক্ষালাভে বঞ্চিত হয়েছিল। এবং শিক্ষার সুযোগ কেবলমাত্র উচ্চবিত্তদের কাছেই উন্মুক্ত ছিল।

(৭) জনহিতকর কাজ

নেপোলিয়ন বেশ কিছু জনহিতকর কাজও করনে। তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সেবা ও আনুগত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘লিজিয়ন অব্ অনার’ নামক উপাধিদানের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া, বহু রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ করেন। আল্পস্ পর্বতের গিরিপথ দিয়ে দু’টি রাস্তা তাঁর আমলেই নির্মিত হয়। তিনি লুভের জাদুঘরকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাদুঘরে পরিণত করেন। তাঁর উদ্যোগে বহু উদ্যান ও প্রাসাদ নির্মিত হয়।

মূল্যায়ন

নেপোলিয়নের উত্থান কালক্রমে ফ্রান্সে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করলেও বহু সামাজিক ও প্রশাসনিক সংস্কারগুলি ছিল বিপ্লবী উদারতার আদর্শে রঞ্জিত। তিনি বিপ্লবের দুটি প্রধান আদর্শ সাম্য ও মৈত্রী’র প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। প্রতিক্রিয়াশীল সামন্ততন্ত্রের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই তাঁর সংস্কারগুলি রচিত ও রূপায়িত হয়েছিল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই সংস্কারগুলি কেবলমাত্র ফ্রান্সের পুনরুজ্জীবন ঘটায়নি, সমগ্র ইউরোপে সামাজিক বিন্যাসের পথ প্রশস্ত করে। ডেভিড্ থমসনের মতে, ‘নেপোলিয়ন ফ্রান্সকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে শান্তি স্থাপন করেন।’

বিপ্লব-পরবর্তী অস্থিরতা নেপোলিয়নের প্রতিভার জাদুস্পর্শে শান্তি ও সমৃদ্ধির ভিত্তি রচনা করে। আইনবিধি সংস্কার করে তিনি বৈপ্লবিক আইনসমূহকে স্থায়িত্ব দান করেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে রক্তের পরিবর্তে যোগ্যতার স্বীকৃতি বিপ্লবী ফ্রান্সের বিরাট শূন্যতাকে পূরণ করে। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি নেপোলিয়নের প্রচেষ্টায় সুদৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই কারণে ফিশার মন্তব্য করেছেন, “নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য স্থায়ী না-হলেও, তাঁর অসামরিক সংস্কারগুলি গ্রানাইট পাথরের ভিত্তির উপর স্থায়ী ভাবে নির্মিত হয়েছে।” তাই বলা চলে, নেপোলিয়নের সংস্কারগুলি বিপ্লবী ভাবধারার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল। এই অর্থে তিনি ছিলেন বিপ্লবের সন্তান। তবে নেপোলিয়নের সংস্কারকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেও বিচার করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক ওলার্ড মনে করেন, নেপোলিয়ন তাঁর কাজের মধ্যে এককেন্দ্রিক স্বৈরাচারকে প্রকট করে তুলেছেন। বিপ্লবের অন্যতম আদর্শ স্বাধীনতা ত’ তিনি দেননি, এমনকি সাম্যের আদর্শকেও তিনি বর্জন করতে চেয়েছেন। ওলার্ডের মতে, নেপোলিয়ন বিপ্লবকে স্তব্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতাকেও হত্যা করেছেন। নারী ও পুরুষের অধিকারের মধ্যে তিনি সচেতনভাবে একটা ভেদরেখা টেনে দিয়েছেন। সম্পত্তির উপরে নারীর অধিকার স্বীকৃতি হয়নি তাঁর আইন-সংহিতায়। নারীশিক্ষা-প্রসারে ছিল তাঁর আন্তরিক অবহেলা এবং বিজ্ঞানশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তিনি ছিলেন সম্ভবত অজ্ঞ।

অবশ্য সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও একজন মহান সংস্কারক হিসেবে নেপোলিয়নের কৃতিত্বকে অস্বীকার করা উচিত হবে না। কারণ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে অগ্রসর হতে হয়েছে। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি সচেতনও ছিলেন। এ প্রসঙ্গে সেণ্ট হেলনা দ্বীপে নির্বাসিত অবস্থায় তাঁর একটি উক্তি স্মরণীয়; ‘আমি অনেক পরিকল্পনা করতে পারতাম, কিন্তু তাকে বাস্তবায়িত করার স্বাধীনতা আমার ছিল না।……..আমি কখনোই আমার নিজের প্রভু ছিলাম না; পরিস্থিতি আমাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রিত করেছে।’

Leave a reply