সাম্যের অর্থ ও প্রকৃতি
সাম্যের প্রকৃত অর্থ
সাম্যের প্রকৃত অর্থ হল সকলের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশসাধনের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধার সমতা। রাষ্ট্র কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব না করে প্রত্যেক নাগরিককে সমান সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার দেবে, যাতে সকলে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সমান সুযোগ পায়। কারুর জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা থাকবে না, প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকবে। রাষ্ট্রের কাছে বা আইনের চোখে সকল নাগরিকই সমান সুযোগ পাবে। ল্যাস্কির মতানুসারে, সাম্যের মূল বৈশিষ্ট্য দুটি। যথা—
১) বিশেষ সুযোগ সুবিধার অনুপস্থিতি এবং
২) সকলের জন্য যথোপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা। সাম্য বলতে ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সকলের সুযোগ-সুবিধার সমতাকে বলা হয়। কিন্তু এর ফলে প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ব সমানভাবে বিকশিত হবে এবং প্রত্যেকেই একই রকম গুণগত যোগ্যতা অর্জন করবে তা বোঝায় না।
মার্কসীয় ধারণা
মার্কসবাদীদের মতানুসারে, ধনবৈষম্যমূলক ও শ্রেণিবিভক্ত সমাজে প্রকৃত সাম্য থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার এবং সাম্য একসঙ্গে থাকতে পারে না। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের অবসানের মাধ্যমে সমাজে সাম্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। অর্থনীতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য ও শ্রেণি-শোষণের বিলোপের দ্বারা সাম্যের পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে এবং প্রকৃত সাম্য সার্থক হতে পারে।
সাম্যের সংজ্ঞা
বার্কারের মতানুসারে, সাম্য কথাটির অর্থ হল সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে কোনোপ্রকার পার্থক্য সৃষ্টি না করা। সাম্যের নীতি অনুসারে অধিকার হিসাবে একজনের জন্য যে সমস্ত শর্ত নিশ্চিত করা হবে, তার সমস্ত কিছু অন্যান্যদের জন্যও সমপরিমাণে নিশ্চিত করা হবে; এবং অনুরূপভাবে অধিকার হিসাবে অন্যান্যদের জন্য যা দেওয়া হবে, একেও তা দিতে হবে। নাগরিক রাষ্ট্রের মধ্যে যে সাম্য ভোগ করে তা হল আইনানুগ বা বৈধ সাম্য। আইনের দৃষ্টিতে সাম্য হল বৈধ সাম্য ।
সাম্যের প্রকৃতি
ল্যাস্কির মতানুসারে সকলের জন্য অভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অস্তিত্বকে সাম্য বলে না। সাম্য বলতে সকলের প্রতি একইরকম আচরণকে বোঝায় না। কারণ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অভাব, সামর্থ্য ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে। প্রত্যেকের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যকে স্বীকার করে নিতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বের প্রকৃষ্টতম বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। এই অবস্থায় সাম্যের সৃষ্টি হবে। ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বৈষম্যের অবসান আবশ্যক। কাজের সুযোগ সুবিধা সকলে সমানভাবে পাবে। সকলে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাসের সমানাধিকার লাভ করবে। প্রত্যেকের মতামতকে মর্যাদা দিতে হবে। কাউকেই অবহেলা করা যাবে না। ল্যাস্কি সাম্যের ধারণার কতকগুলি দিক তুলে ধরেছেন :
১) বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি,
২) সকলের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা,
৩) আত্মোপলব্ধির জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা ও প্রশিক্ষণ প্রদান,
৪) অত্যাবশ্যক চাহিদা পুরণের ক্ষেত্রে সমানাধিকার স্বীকার, এবং
৫) ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা অর্জন। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতানুসারে, ‘সাম্য হল মূলত একটি আনুপাতিকতার সমস্যা। আনুপাতিকতার সমস্যা হল প্রধান আর্থনীতিক সমস্যা’।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .