কৃষি বনসৃজন বা অ্যাগ্রো ফরেস্ট্রি বা কৃষি অরণ্য
FAO, – 1980 র মত অনুসারে কৃষকের নিজের অধিকারভুক্ত কৃষি বা জমিতে কৃষিফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কাঠ, সবুজ সার, ওষুধ, ছায়া, ফলমূল ইত্যাদি আহরণের জন্য গাছপালা লাগিয়ে যে বনভূমি গড়ে তোলা হয়, তাকে কৃষি-বনসৃজন বা কৃষি অরণ্য বা অ্যাগ্রো ফরেস্ট্রি (Agro-Forestry) বলে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক উৎপাদক থেকে সংগঠকে পরিণত হয়।
কৃষি বনসৃজনের সুবিধা
কৃষি বনসৃজনের মাধ্যমে যে সমস্ত প্রাকৃতিক ও আর্থ-সামাজিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় বা যে সমস্ত সুবিধা ভোগ করা যায়, সেগুলি হল-
(১) অব্যবহৃত, পতিত, পরিত্যক্ত ও সাধারণভাবে চাষবাসের অনুকূল নয় এমন জমিকে অর্থনৈতিকভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, উৎপাদনশীল করা যায়।
(২) ভূমিক্ষয় নিবারণ করা যায়।
(৩) কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায়। কারণ কৃষি ফসল ছাড়াও ফলমূল, কাঠ ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানোর সুযোগ হয়।
(৪) ছদ্ম বেকারত্ব কমে। কৃষকের পরিবারভুক্ত লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
(৫) জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়ে।
(৬) জমিতে অন্যান্য সুষম পুষ্টিমৌল সরবরাহের পরিমাণ বাড়ে।
(৭) জ্বালানির প্রয়োজন মেটে।
(৮) নিজের প্রয়োজনমতো কাঠ কৃষক নিজেই উৎপাদন করতে সমর্থ হয়।
(৯) বাজারে কাঠের জোগান বাড়ে। ফলে একদিকে কাঠের দাম নাগালের মধ্যে অন্যদিকে কাঠের জন্য বনভূমি ধ্বংস করার প্রবণতা কমে।
(১০) ভেষজ গাছগাছড়ার জোগান বৃদ্ধি পায়। ওষুধ শিল্পে কাঁচামালের অভাব কমে।
(১১) পশুখাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।
(১২) দুষণ প্রতিরোধ করা যায়।
(১৩) প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষিত হয়।
কৃষি বনসৃজনের অসুবিধা
(১) কৃষি বনভূমি গড়ে তোলার জন্য অনেক সময় লাগে (long gestation period)। ফলে কৃষকের তাৎক্ষণিক লাভের সুযোগ কম।
(২) অনেকের মতে ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছ মাটির রস বেশি মাত্রায় শোষণ করে নেয়। ফলে মাটি রুক্ষ হয়ে পড়ে।
(৩) সঠিক প্রজাতির গাছ বাছাই করা না হলে, জমি ছায়াঘন হয়ে পড়ে। সে কারণে স্বাভাবিক কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
(৪) কৃষি বনসৃজনের জন্য উদ্ভিদের কোনো বিদেশি (exotic) প্রজাতি রোপণ হলে, স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে তার অভিযোজন নাও হতে পারে। এই নতুন উদ্ভিদকে আশ্রয় করে ক্ষতিকর পোকার (pest) আমদানি হতে পারে।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .