সাইলেন্ট ভালি আন্দোলন
ইংরেজী সাইলেন্ট কথাটির অর্থ হল নিস্তব্ধ এবং ভ্যালি কথার অর্থ হল। উপত্যকা। সাইলেন্ট ভালি কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল নিস্তব্ধ উপত্যকা। ভারতের কেলারা রাজ্যে পালঘাটের পাহাড়ী বনপরিবেশ এত নির্জন, নিঃস্তব্দ ও শান্ত, তাই এই অঞ্চলটিকে সাইলেন্ট ভ্যালি বলা হয়। এর আয়তন প্রায় ৮,৫৯২ হেক্টর।
সত্তরের দশকে এই বিস্তৃর্ণ বসতি অরণ্যের মধ্যে কুন্তি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে কেরালা রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ প্রায় ৮০০ হেক্টর বনভূমি নষ্ট করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সুবৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবার চেষ্টা করে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে অরণ্যের একটি বৃহৎ অংশ জলে প্লাবিত হত, যার জন্য অরণ্যের অবক্ষয় ছিল অবধারিত।
এই পরিক্লপনার বিরুদ্ধে কেলালা রাজ্যেরজনগণ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে—এই পরিবেশ সম্পর্কিত আন্দোলনই সাইলেন্ট ভালি আন্দোলন নামে পরিচিত ও বিখ্যাত। এই আন্দোলন শুধুমাত্র কেরালা রাজ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এই আন্দোলনের ঢেউ সমগ্র ভারতে, এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক এক বিশেষ সমীক্ষক দল পাঠায় সরেজমিন তদন্ত করতে। শেষ পযন্ত পরিবেশ মন্ত্রক, কৃষিমন্ত্রক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের পরামর্শ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এই পরিকল্পনার রূপায়নের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আন্দোলন ও তাৎপর্য
১৯৭৮ সালে কেরালার একটি স্বেচ্ছাসেবী বিজ্ঞান সংস্থা এবং কেরালার শাস্ত্রীয় সাহিত্য পরিষদ বৃষ্টি অরণ্যকে বাঁচানোর জন্য যে আন্দোলন শুরু করে তা ভারতের প্রথম ব্যাপক ও সংগঠিত পরিবেশ আন্দোলন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, প্রস্তাবিত প্রকল্প রূপায়িত হলে এই এলাকার বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে, ফলে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে।
“Friends of the Trees’ বা গাছপালার বন্ধু নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান জন্ম নেয় এবং তাঁরাও এই প্রকল্পের তীব্র বিরোধিতা করে।
‘World Wil Ilife Fund’ নামক প্রকৃতির জন্য বিশ্ব অর্থ ভাণ্ডার। জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে দশ বিদেশে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করে।
কেরালা সরকার এই প্রকল্প রূপায়নে বদ্ধপরিকর থাকলেও ১৯৮০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আন্দোলনের গুরুত্ব বুঝে তা আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ করেন।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .