আলোর প্রতিসরণের সূত্র
প্রতিসরণ
যখন কোনো আলোকরশ্মি কোনো স্বচ্ছ সমসত্ত্ব মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অপর কোনো আলোক মাধ্যমে তির্যকভাবে আপতিত হয়, তখন দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশের সময় ওই আলোকরশ্মি গতির অভিমুখ পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয় মাধ্যমের বিভেদতলে আলোকরশ্মির গতির অভিমুখ পরিবর্তনের এরূপ ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
আলোরশ্মির প্রতিসরণের ক্ষেত্রে, AO = আপতিত রশ্মি, OB = প্রতিসৃত রশ্মি, COD = অভিলম্ব, EOF = দুই মাধ্যমের বিভেদতল, ∠AOC = আপাতন কোণ (i), ∠BOD = প্রতিসরণ কোণ (r)।
প্রথম ক্ষেত্রে অর্থাৎ আলোকরশ্মির লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে আপাতন কোণ (i) > প্রতিসরণ কোণ (r) এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ আলোকরশ্মির ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসরণের ক্ষেত্র আপাতন কোণ (i) < প্রতিসরণ কোণ (r)।
জেনে রাখো
প্রথম মাধ্যমটি শূন্য হলে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ককে পরম প্রতিসরাঙ্ক বলে। যেমন, বায়ু সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5 এবং বায়ু সাপেক্ষে জলের প্রতিসরাঙ্ক 1.33।
বায়ু সাপেক্ষে জলের প্রতিসরাঙ্ক 1.33 বলতে বোঝায় যে, হলুদ বর্ণের আলোকরশ্মি বায়ু থেকে জলে প্রবেশ করলে ওই রশ্মির আপতন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত 1.33 হয়।
আলোক রশ্মি দুই মাধ্যমের বিভেদতলে লম্বভাবে আপতিত হলে আপতন কোণ i = 0 হয়। স্নেলের সূত্রটি পরীক্ষামূলকভাবে এক্ষেত্রে প্রমাণ করা যায় না, কারণ i = 0 হলে, r = 0 হয় এবং \frac{\sin i}{\sin r} = \frac{0}{0} অসংজ্ঞাত লম্বভাবে আপতিত আলোকরশ্মি কোন দিক পরিবর্তন না করেই প্রথম মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রবেশ করে।
প্রতিসরণের সূত্র
1. আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে দুই মাধ্যমের বিভেদতলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব সর্বদা একই সমতলে থাকে।
2. দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম এবং একটি নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণ-এর সাইন (sine)-এর এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক হবে।
\frac{\sin i}{\sin r} = µ (ধ্রুবক) এটি স্নেলের সূত্র নামে পরিচিত।
এই ধ্রুবক -কে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।
সংকট কোণ
আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যমে থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসৃত হওয়ার সময় দুই মাধ্যমের বিভেদতলে যে বিশেষ আপাতন কোণের জন্য প্রতিসরণ কোণ 90° হয়, অর্থাৎ প্রতিসৃত রশ্মি দুই মাধ্যমের বিভেদতল ঘেঁষে যায়, সেই আপাতন কোণকে ঐ দুই মাধ্যমের সংকট কোণ বলে। চিত্রে By হল সংকট কোণ।
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন
ঘনতর মাধ্যম থেকে লঘুতর মাধ্যমে আলোকরশ্মি প্রতিসৃত হওয়ার সময় যদি ঘনতর মাধ্যমে আপতন কোণ মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বড়ো হয়, তাহলে রশ্মিটি লঘুতর মাধ্যমে প্রতিসৃত না হয়ে মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতল থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়ে পূর্বের মাধ্যমে ফিরে আসে একে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন বলে।
★ উদাহরণ: (1) মরুভূমির মরীচিকা, (2) হীরকের ঔজ্বল্য।
জেনে রাখো
আলোকের আভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন এবং সংকট কোণ কেবলমাত্র আলোকরশ্মির ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়। কখনই লঘু থেকে ঘন মাধ্যমে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে সংকট কোণ পাওয়া যায় না।
Leave a reply
You must login or register to add a new comment .