Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

ঔপনিবেশিক ভারতে নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

ঔপনিবেশিক ভারতে নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

ঔপনিবেশিক ভারতে নারী আন্দোলন

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে প্রথম নারী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সমাজ থেকে সতীদাহের মত নির্মম প্রথার উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যার নেতৃত্বে নারী নয় ছিলেন একজন বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ও উইলিয়াম বেনটিঙ্ক। এই পর্বে তাঁরা অমানবিক সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ করে সমাজে বিধবাদের বেঁচে থাকার অধিকার এনে দেন। নারীদের বাল্যবিবাহ রোধ করেন। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি আইনের মধ্য দিয়ে মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার প্রদানে অগ্রসর হন। এ-ছাড়াও সেই যুগে কিছু উচ্চ শ্রেণির হিন্দু নারী সমাজ থেকে ব্রাহ্মণ্যবাদকে অপসারিত করতে উদ্যোগী হন। যার মধ্যে ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা সাম্মানিক স্নাতক (১৮৮৬) নারীবাদী কবি কামিনী রায়।

ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ থেকে ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (১৮৮৫) শুরু হয়ে গেলে মহিলাদের মর্যাদা উন্নয়নের সকল আন্দোলন ও প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে ভারতীয়দের পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিকদের হস্তক্ষেপকে (‘colonial interventions in gender relations) ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রতিহত করে। সেই যুগেও বেশ কয়েকজন নারী পুরুষতান্ত্রিকতাক উপেক্ষা করে ভারতের বেশকিছু স্থানে শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলে ঝাঁসির রানি লক্ষ্মী বাঈ, কিছুরের রানি চেনাম্মা, ভূপালের কাইদিশা এবং পাঞ্জাবের ঝিন্দ কাউর। নারী আন্দোলনে লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রাধান্য দেওয় হলেও কিন্তু মহিলাদের নারী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যায় নি। যা কিছু হয়েছে তা পুরুষদের উদ্যোগে, পুরুষরাই আন্দোলনের পুরোভাগে থেকেছেন ও পুরুষরাই সমাজে নারীদের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

এই সময়কালে ভারতের কয়েকজন মুষ্টিমেয় মহিলা যাঁরা ঔপনিবেশিক শাসনে শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করে আধুনিকতার সংস্পর্শে এসেছেন তাঁরাই এই নারী আন্দোলনে উপকৃত হয়েছেন। এই সমস্ত মহিলারা পিতা বা স্বামীর হাত ধরে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আর কিছু উচ্চবর্ণের নারী নিজ গুণে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে সনাতনপন্থীদের সঙ্গে আধুনিকতানুরাগীদের মধ্যে একটা বিবাদ থাকলেও আসল যুদ্ধটা ছিল ভারতীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে তার অভিন্নতার। যার ফলে নারী অধিকার অধরা থেকে গেছে। নারী শুধু সনাতন মতবাদের সঙ্গে আধুনিকতার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে থেকেছেন।

বিংশ শতকের শুরুতে ভারতে কিছু মহিলা সমিতির আবির্ভাব ঘটেছে এবং সেগুলিও পুরুষদের প্রচেষ্টায় জন্মলাভ করেছে। তখন কিছু ক্লাব ও সংগঠন মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ও শিক্ষা দিয়ে জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাজে নারীদের প্রতি মূল্যবোধ ও লিঙ্গ বৈষম্যের চেহারার কোনও পরিবর্তন হয়নি। দেখা গেছে মহিলারা যখনই লিঙ্গ বৈষম্যের কথা তুলে সমাজে তাদের নিজেদের তুলে ধরতে চেয়েছেন তখনই লিঙ্গ বৈষম্য আরও স্পষ্টভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে।

সেই সময় স্থানীয় সংগঠনগুলির সহায়তায় জাতীয় স্তরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নারী আন্দোলনের জন্ম হয়; তার মধ্যে একটি Women’s Indian Association (WIA ) এবং অপর দু’টি National Council of Indian Women (NCIW) ও All-India Women’s Conference (AIWC)। প্রথম দু’টি নারী আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়। কারণ, এই সংগঠন দু’টি ভারতীয় সমাজের সম্ভ্রান্ত ঘরের মহিলাদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল। সেইজন্য তাঁরা ভারতের নিম্ন অন্ত্যজ শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। তবে তা সত্ত্বেও তখন নারী আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সমাজের উচ্চবর্ণের পরিবারসমূহের সঙ্গে এঁদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল ছিল । কিন্তু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃতীয় সংগঠনটির সম্পর্ক থাকায় তারা জাতীয় স্তর পর্যন্ত নারী আন্দোলনকে পৌঁছে দিতে পেরেছিল ও এই আন্দোলনে বেশ সাফল্য অর্জন করেছিল।

Leave a reply