Register Now

Login

Lost Password

Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.

Captcha Click on image to update the captcha .

Add question

স্বাধীনোত্তর ভারতে নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

স্বাধীনোত্তর ভারতে নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

স্বাধীনোত্তর ভারতে নারী আন্দোলন

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে নারী আন্দোলনকে একটা মতবাদ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। পুরুষজাতিকে নারীদের উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে ভাবা হয়নি। নারীদের সমান অধিকার লিঙ্গ বৈষম্যের কাছে এক ধরনের অলঙ্কার হয়ে রয়েছে। সমাজের সকলে মনে করেন উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুবিধা বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে যেমন সকলকে সমান সুবিধা দেয়, তেমনি ভারতের নারী ও অন্যান্যদের সমান সুবিধা প্রদান করবে। এরজন্য উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে নারীদের সামিল করার প্রয়োজন নেই। তাঁরা যেমন ঘর-গৃহস্থালী নিয়ে আছেন তেমনিই থাকুক। অর্থাৎ, আন্তরিকভাবে ভারতের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মানুষজনরা নারীদের ঘরের বাইরে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে কর্মে নিযুক্ত হয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোন ও দেশের উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের অংশীদার হোন তা কেউই চান না।

কিন্তু অতি অল্প দিনের মধ্যে এ-ধারণা পাল্টে যায় সত্তরের দশকে যখন ১৯৭৪ খ্রিঃ ভারতীয় নারীদের মর্যাদা নিয়ে গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, এত দিন ধরে সমাজে ভারতীয় মহিলাদের অবস্থার কোনও উন্নতিই হয়নি, বরং তাদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। বহু ভারতীয় নারী বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণির অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

সেই সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়ে। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে নারী সমাজকে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে “New Social Movements” নামে একটি প্রকল্প ঘোষিত হয় যেটি পূর্বে গৃহীত কোনও কর্মসূচির অন্তর্গত ছিল না। এই প্রকল্পে মহিলাদের উন্নয়নে কোনও ব্যাপক ও বিস্তৃত কোনও পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়নি। বলা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে স্থানীয় মহিলাদের নেতৃত্বে বিষয় ভিত্তিক অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিকে কর্মসূচির অন্তর্গত করতে হবে এবং তা যাতে দ্রুত বাস্তবে রূপায়িত হয় তার উপর জোর দিতে হবে। এত দিন যাঁরা মহিলাদের উপর থেকে নেতৃত্ব দিতেন (top down) তাঁদের অপসারণ করে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটান হল নীচের থেকে উপরে দিকে (bottom up)। ফলে সমাজের সম্ভ্রান্ত শ্রেণির নেতৃত্বের পরিবর্তনে স্থানীয় নেতৃত্ব সরাসরি তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ লাভ করল। তৃণমূল স্তর থেকে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায় সমাজে নারীদের সংগঠিত করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সুযোগ বৃদ্ধি করা হল। নারীদের উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন আইনও পাশ করা হল। এদিকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ১৯৭৫-৮৫ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালকে ‘International Women’s decade’ বলে ঘোষণা করে। সুতরাং, এই সময় কালে নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নারীরা প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নের সুফল কতটা লাভ করতে পেরেছিলেন তার ক্ষতিয়ান নেওয়া দরকার। এ প্রসঙ্গে সমিতা সেন বলেছেন, “(…) the more the laws were changed, the more things remained the same.”। অর্থাৎ, আইনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কোনও সুফল পাওয়া যায়নি।

আশির দশকে ভারতের নারী আন্দোলন পুনরায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ফলে নারী আন্দোলনের অভিমুখ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শাহ বানু মামলা ও দিয়োরলার সতীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিন্ন দেওয়ানি সংহিতার (Uniform Civil Code) দাবি উঠতে থাকে। ফলে ভারতের নারী আন্দোলনে তখনও অনেকে সম্ভ্রান্তদের উপস্থিতি দেখতে পান। এর ফলে নারী আন্দোলনের একতার মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। প্রশ্ন তোলা হয় সর্বজনিক মানবাধিকারের দাবিকে উপেক্ষা করে কীভাবে নারী আন্দোলন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। কারণ, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তগত আইনকে উপেক্ষা করে সকলের জন্য অভিন্ন দেওয়ানি সংহিতার দাবি জানানো যায় না। এই নিয়ে নারী আন্দোলনকারীদের ও রাজনীতিবিদের মধ্যে বহু বিতর্কের অবতারণা করা হয়। ভারতীয় রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও ভারতীয় সমাজে রাজনীতিকে ধর্মের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে তা ঠিক নয় বলে অনেকে অভিমত প্রদান করেন। অনেকে আবার এই বলে অভিযোগ করেন নারী আন্দোলনের গতিমুখ নারী অধিকার আদায়ের উপর গুরুত্ব আরোপ না করে ভারতে জাতীয় ঐক্য আনয়নে বেশি সচেষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভারতের নারী আন্দোলন ভারতীয় সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য অপসারণের দাবি নিয়ে শুরু হয়ে নারীর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হলেও, ভারতীয় সমাজের নারীরা তাঁদের মহিলা সুলভ ভাবমূর্তি (Feminine icon) পরিত্যাগ করতে পারেননি। সমগ্র দেশে হাতে গোনা কয়েকজন মহিলা এই ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর রাজনীতির অঙ্গে প্রবেশ করতে পেরেছেন মাত্র। ফলে নারীরা মহিলা ভাবমূি পরিত্যাগ করে যত দিন না ঘরের বাইরে এসে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তোলার মানসিকতা না নিতে পারছেন তত দিন ভারতে নারী আন্দোলনের সুফল অধরা থেকে যাবে। পুরুষদের নেতৃত্বে নয়, নারী আন্দোলনে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। জাত-পাতের লড়াই, ধর্মীয় লড়াই, ধনী-নির্ধনে ভেদাভেদ পরিত্যাগ করে যেদিন ভারতের নারী নিজেদের শিক্ষিত করে তুলে সমাজে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে পারবে সেদিন থেকে সমাজে নারীরা পুরুষদের উপর নির্ভর না করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথ খুঁজে পাবে।

Leave a reply